নিউজ ডেস্ক,অমৃতালোক :
কোনো দলকে বাদ নয়। সব দলের সমান সুযোগ রেখে অংশগ্রহণমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দ্য ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনকে দেয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে বর্ণনা করা হয় ‘ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে। অন্যদিকে তাদের পতনে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও একক বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে দলটি। বিএনপি’র অন্যতম সিনিয়র নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০১১ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও ২০১৬ সাল থেকে দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন সর্বশেষ সরকারের মেয়াদে তিনি মন্ত্রী পরিষদের সদস্যও ছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যতিক্রমী নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম, যার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে ঢাকার বাইরে। তবে দলের শীর্ষ পর্যায়ে উঠে এসেছেন। ২০১১ সাল থেকে পরবর্তী সময়টাকে বিএনপি’র জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পিরিয়ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে বসবাস করছেন লন্ডনে। এ সময়ে বিএনপি’র শীর্ষ নেতা হিসেবে বাংলাদেশের রাজপথে সক্রিয় মির্জা ফখরুল। তিনি দ্য ডিপ্লোম্যাটকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তাতে তিনি দলের অবস্থান, বাংলাদেশে বর্তমানে জনগণের মধ্যে যেসব ইস্যুতে বিতর্ক হচ্ছে তার সমাধান সহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন। নয়াদিল্লিতে সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের গবেষক শাহাদাৎ হোসেন তার ওই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এখানে সাক্ষাৎকারটি প্রশ্নোত্তর আকারে তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: ছাত্র-জনতার এই বিপ্লবকে আপনি কি কোনো বিপ্লব হিসেবে নাকি গণঅভ্যুত্থান হিসেবে বিবেচনা করেন?
উত্তর: নিঃসন্দেহে এটা ছিল গণঅভ্যুত্থান। ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে বিএনপি’র নেতৃত্বের অধীনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো ফ্যাসিস্ট সরকারের নিষ্পেষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছিল। এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের হাতে। এতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী রাস্তায় নামে। মর্মান্তিকভাবে এ সময়ে বহু শিক্ষার্থী তাদের প্রাণ হারিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে এই আন্দোলন কোনো গণবিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানের রূপ নেয়নি। কিন্তু (রংপুরের শিক্ষার্থী) আবু সাঈদের বিয়োগান্তক মৃত্যুর পর তা মোড় পরিবর্তনে রূপ নেয়। তার মৃত্যু সব রাজনৈতিক দলকে বেদনাহত করে এবং ঐক্যবদ্ধ করে। এতে সরকার হটাতে একত্রিত হন তারা। সম্মিলিত শক্তি হিসেবে তা রূপ নেয়। এর ফল হিসেবে আসে গণঅভ্যুত্থান। আমরা এটাকে একটি বর্বর ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠীর পতন হিসেবে দেখি। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিবর্তনের একটি নতুন সুযোগ হিসেবে দেখি। শিক্ষার্থীরা প্রথমদিকে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। এই বৈষম্য দীর্ঘদিনের একটি ইস্যু। এই বৈষম্য দূর করার জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য এবং একটি সংগঠিত রাজনৈতিক কাঠামো। ফলে আমরা জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিই এবং তা অর্জনে কাজ করি। বর্তমানে ক্ষমতায় অন্তর্বর্তী সরকার। তারা সংস্কারমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের জন্য এসব হলো প্রথম পদক্ষেপ।
প্রশ্ন: আপনি জাতীয় ঐক্যের প্রতি জোর দিয়েছেন। সম্প্রতি একজন উপদেষ্টা বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আন্দোলনের ছাত্রনেতারা জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছে। কিন্তু এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। আপনার দল কেন জাতীয় সরকারের ধারণাকে সমর্থন করছে না।
উত্তর: জাতীয় সরকার গঠনে ছাত্রনেতাদের তরফ থেকে দেয়া কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে আমি অবহিত নই। তবে ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর প্রতিনিধিরা আমাদের কাছে এসেছেন একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাজেশন নিয়ে। তারা বেশ কিছু নাম প্রস্তাব করে সে বিষয়ে আমাদের মতামত চেয়েছেন। আমরা সে অনুযায়ী মত দিয়েছি।
প্রশ্ন: এর মধ্যে দেশে ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো সংবিধান সংস্কার বিষয়ক। এই প্রক্রিয়ায় আপনার দল কীভাবে প্রতিনিধিত্ব করে এবং জড়িত হয়েছে?
উত্তর: সংস্কার কমিটিতে বিএনপি’র কোনো প্রতিনিধি নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমনভাবে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাভাবিক রীতি। তবে তারা আমাদের মতামত চেয়েছে এবং আমরা আমাদের মতামত পাঠাবো।
প্রশ্ন: বিএনপি নির্বাচন দাবি করছে এবং এখন তাদেরকে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তবে সমালোচকরা যুক্তি দেখান যে, যদি ক্ষমতায় যায় তাহলে বিএনপি হয়ে উঠবে আরেকটি ‘আওয়ামী লীগ’। বিশেষ করে যেসব রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে ৫ই আগস্টের পর দখলদারিত্ব এবং লুটের সঙ্গে যুক্ত বিএনপি’র তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা ও কর্মী।
উত্তর: বিএনপিবিরোধী মিডিয়া এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের নেতিবাচক অপপ্রচার ছাড়া এটা অন্য কিছু না। গণঅভ্যুত্থানের পর এমন সব ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। আমরা ঘটনাগুলো যে ঘটেনি, সেটা প্রত্যাখ্যান করছি না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এরকম ঘটনা ঘটেছে। এসব ইস্যু সমাধানে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বিএনপি। আমরা এমন ঘটনায় জড়িত প্রায় ৭০০ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছি। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জনগণের আস্থা সমুন্নত রাখার জন্য আমরা দলের ভেতরে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রশ্ন: সবসময়ই আওয়ামী লীগ দাবি করে আসছে যে, অন্য দলগুলোর অধীনে সংখ্যালঘু হিন্দুরা নিরাপদ নয়। ৫ই আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। রাজনৈতিক হামলা বলে এসব ঘটনার সবটাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন না আপনি। এটা কি আওয়ামী লীগের দাবিকে যথার্থতা দেয় না?
উত্তর: হ্যাঁ, সুনির্দিষ্ট কিছু ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক সদস্য- যারা অবিচার করেছে, নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং সারা দেশে সাধারণ মানুষের সম্পদ লুট করতে টার্গেট করেছিল- এটা তো বিএনপি করেনি বা শিক্ষার্থীরা করেনি। ১৮ বছর ধরে চালানো অপমান, বঞ্চনা ও ক্ষোভের কারণে এই হামলাগুলো হয়েছে। তবে এসব ঘটনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করে সংখ্যালঘুদের ওপর নিষ্পেষণ হিসেবে চালানো হয়েছে। কিছু মানুষ এই অপপ্রচার ছড়ানোর সঙ্গে লিপ্ত। তারা দাবি করছে- বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা তীব্রতর হয়েছে। আসলে এটা জাতীয় স্বার্থকে খর্ব করে। এর পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি করার প্রচেষ্টা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই প্রচারণা তুলে ধরছে আওয়ামী লীগ। তারা বলছে, দেশে সাম্প্রদায়িকতার উত্থান ঘটেছে। এর উদ্দেশ্য ভারত ও তার অন্য মিত্রদের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়া। এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর হিসেবে একমাত্র তাদেরকেই দেখে তারা। দৃঢ়ভাবে বলতে চাই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নিষ্পেষণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
প্রশ্ন: আপনাদের লক্ষ্য ক্ষমতায় আসা। জনগণের মতামত আপনাদের দিকে। বিএনপি’র পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে? আপনারা সর্বশেষ যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন বাংলাদেশ ‘লুক ইস্ট’ নীতি গ্রহণ করে। এবার আমরা কোনো বিস্ময়কর কিছু প্রত্যাশা করতে পারি?
উত্তর: আমাদের পররাষ্ট্রনীতি একেবারে সাধারণ- আমরা বন্ধু চাই, প্রভু নয়। সব দেশকে আমরা বন্ধু হিসেবে দেখবো, বড় ভাই হিসেবে দেখবো না। কোনো রাষ্ট্রের ওপর আমাদেরকে অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হতে দেবো না। আজকের সম্পর্কযুক্ত বিশ্বে, সংযুক্তিতে, ব্যবসা এবং বন্ধুত্ব অত্যাবশ্যক। তবে আমরা আমাদের আত্মনির্ভরশীলতাকে নিশ্চিত করবো।
প্রশ্ন: ভারত একটি বড় প্রতিবেশী দেশ। ভারতের সঙ্গে সবসময়ই আপনার দলের সম্পর্কে উত্থান-পতন দেখা গেছে। গত এক দশকে চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও এই সম্পর্কের নতুন কোনো ‘এভিনিউ’ খুলতে ব্যর্থ হয়েছেন আপনি। ভারতের সঙ্গে বিএনপি’র সম্পর্ক কেমন হতে যাচ্ছে এবং তা কীভাবে মূল্যায়ন করেন আপনি?
উত্তর: প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার বিষয়ে সবসময়ই আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের ঘোষিত নীতির এটা একটা মূল অংশ। (শহীদ) প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় থেকেই, যখনই আমরা ক্ষমতায় ছিলাম, তখনই ভারতের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক রাখার জন্য অব্যাহতভাবে কাজ করেছি। তবে আমাদের জাতীয় স্বার্থকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। পানিবণ্টনের মতো ইস্যুগুলোর সমাধান হতে হবে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ হতে হবে। সংযুক্তিতে সমতা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের কাছ থেকে নেয়া সুবিধাগুলোর অবশ্যই প্রতিদান দিতে হবে। উপরন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের অপ্রয়োজনে হস্তক্ষেপ কখনোই মেনে নেয়া হবে না। আমরা আশা করি- এ ধরনের হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ।
প্রশ্ন: ভারত থেকে বর্তমান সরকার ও বাংলাদেশ সম্পর্কে ভূরি ভূরি মিথ্যা তথ্য ও অপতথ্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা নতুন কিছু নয়। আপনার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানেরও বদনাম করা হয়েছে ভারতীয় মিডিয়ায়। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়ে খুব বেশি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে ভারত। এই সমস্যা থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশ?
উত্তর: এসব মিথ্যা তথ্যকে মোকাবিলার একমাত্র পথ হলো একটি শক্তিশালী ও জনগণের শক্তিতে বলীয়ান সরকার প্রতিষ্ঠা করা। সর্বোপরি বাংলাদেশের প্রয়োজন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি নেতৃত্ব। সব রাজনৈতিক দলের এটা স্মরণ রাখা উচিত যে, আমরা একটি স্বাধীন রাজনৈতিক সত্তা। আমরা একটি স্বাধীন দেশ। আমরা আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে সক্ষম। উপরন্তু বাংলাদেশকে পাল্টা বাধ্যতামূলক আখ্যান তৈরি করতে হবে। ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে কার্যকরভাবে প্রকৃত তথ্য ও প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে হবে।
প্রশ্ন: নতুন একটি রাজনৈতিক মীমাংসা নিয়ে আলোচনা করছে তরুণরা। এটা নিয়ে আপনার দল খুব বেশি আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না। এ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
উত্তর: নতুন রাজনৈতিক মীমাংসার মানে কি? এই আইডিয়া দিয়ে তারা কী বোঝাতে চান তা পরিষ্কার করতে হবে। আমি জানতে চাই: তাদের নতুন রাজনৈতিক ‘সেটেলমেন্ট’ প্রকৃতপক্ষে কী? এ বিষয়ে লিখিত বা ডকুমেন্টেট কিছু আমি দেখিনি। তারা যে প্রস্তাব দিয়েছে সে বিষয়ে আমার দৃঢ় বোধ আসেনি। যে ধরনের রাজনীতি আমরা করি তা এরই মধ্যে আমাদের সংবিধানে বলা আছে। যদি তাদের সুস্পষ্ট কোনো দৃষ্টিভঙ্গি থাকে তাহলে সে বিষয়ে তাদের প্রস্তাব রাখা উচিত।
প্রশ্ন: শুধু আপনার দলই নয়, কিন্তু অন্য অনেকে ফ্যাস্টিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে। আসন্ন নির্বাচনে জনগণ আপনার দলকে কেন ভোট দেবে বলে মনে করেন?
উত্তর: বিএনপি হলো জনগণের দল। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাজনীতি চর্চা করে এ দল। জনগণ স্বাধীনতা চায়। তারা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বসবাস করতে চায়। তারা ভোট দিতে চায়। সুষ্ঠু নির্বাচনে তাদের নেতা নির্বাচিত করতে চায়। কাজের এবং সমৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ চায়। এসব সুযোগ সৃষ্টি করে বিএনপি। বিএনপি তিনবার সরকার চালিয়েছে। সব সময়ই তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতার মেয়াদে রাজনীতিতে মৌলিক সংস্কার এনেছে বিএনপি। প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান চালু করেছেন বহুদলীয় ব্যবস্থা। তিনি এর আগের একদলীয় ব্যবস্থা বদলে দিয়েছেন। তারপরে বেগম খালেদা জিয়ার অধীনে সংবিধানে সংবিধানে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রাজনৈতিক উদ্ভাবনে এটা একটি মাইলফলক। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে একটি ত্রুটিপূর্ণ সোশ্যালিস্ট মডেল থেকে একটি মিশ্র ও বৈচিত্র্যময় অর্থনীতির দিকে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। এটাকে আমরা এখন মুক্ত বাজার অর্থনীতি বলে থাকি। এর পথ ধরে বেসরকারি আর্থিক খাতের যাত্রা শুরু হয়, এর মধ্যদিয়ে বড় রকমের রূপান্তরে নেতৃত্ব দেয়। বর্তমানে আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি গার্মেন্ট খাত। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বের অধীনে এই খাতের যাত্রা শুরু হয়। তার এই উদ্যোগের ফলে দেশে রেমিট্যান্স আসা শুরু হয়। পরে বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষমতার মেয়াদে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে আছে ব্যাংক খাত। জনগণের সমস্যা চিহ্নিত করে উন্নয়নকে গতিশীল করার প্রমাণিত রেকর্ড আছে বিএনপি’র। বিচার বিভাগ ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে বিএনপি। এগুলো হলো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক স্তম্ভ।
প্রশ্ন: স্বাধীনতার পর থেকে ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি দেখছেন আপনি। তরুণ প্রজন্ম, যাদের বেশির ভাগই সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে, তারা আগামী ৫০ বছরে দেশের রাজনীতিকে একটি আকৃতিতে নিয়ে আসতে পারে। তরুণ প্রজন্মের রাজনীতি কোনদিকে যাচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: এরই মধ্যে রাজপথে এবং সরকারে- উভয় ক্ষেত্রে রাজনীতিতে সক্রিয় তরুণ প্রজন্ম। সরকার চালানোতে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা বর্তমান। তাদের প্রাথমিক দাবি বৈষম্যবিরোধী সমাজ ব্যবস্থা বলেই মনে হয়। তারা যেসব পরিবর্তন চায় তা এখনো আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বা প্রামাণ্য প্রস্তাব হিসেবে আমরা দেখতে পাইনি। তারা সাম্প্রতিক ঘটনাকে একটি বিপ্লব হিসেবে বলে থাকে। ব্যক্তিগতভাবে আমি একে বিপ্লব বলে মনে করি না। কারণ, ছাত্রদের নেতৃত্বে এটা ছিল গণঅভ্যুত্থান এবং একটি গণতান্ত্রিক পরিবর্তন। একজন উদার গণতন্ত্রপন্থি হিসেবে আমি বিশ্বাস করি অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি, যেখানে অংশগ্রহণের জন্য সব দলের সুযোগ থাকবে- কোনো রাজনীতিকে বাদ দিয়ে নয়। রাজনৈতিক দলের প্রতি জনগণের পছন্দ বাছাই হতে হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। এজন্যই আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দেয়ার জন্য জোর অনুরোধ করি। বর্তমানে যেসব চ্যালেঞ্জ এবং বিতর্ক আছে তার অনেকটারই সমাধান হয়ে যাবে নির্বাচনে। তা না হওয়া পর্যন্ত যুক্তিতর্ক ও বিতর্ক অব্যাহত থাকবে। যদিও অভিযোগ আছে যে, ‘বিএনপি সংস্কারের বিরোধী’ অথবা ‘দুর্নীতিতে যুক্ত বিএনপি’ তবু আমরা দুই বছর আগে সংস্কার শুরু করেছি। সামনে তা অব্যাহত থাকবে। গণতন্ত্রে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী জাতীয়তাবাদী দল আমরা। এটা তাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে, যারা পরাধীনতা পছন্দ করে। পরিশেষে আমরা এমন একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই যেখানে গণতান্ত্রিকভাবে সব সমস্যার সমাধান চর্চা করা হবে। আমরা যে নীতিটি নিশ্চিত করতে চাই তা হলো- ‘আপনার মতের সঙ্গে আমি একমত না-ও হতে পারি। কিন্তু আপনার স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকারকে সুরক্ষিত রাখবো’। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো ব্যাপক দারিদ্র্য। এটা জনসংখ্যার বৃহৎ অংশকে প্রভাবিত করে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এসব ইস্যুতে জরুরি ভিত্তিতে দৃষ্টি দিতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি মাঝে মাঝেই জোর দিয়ে বলেন যে, আপনার দল উদার ও গণতান্ত্রিক। আপনার দলের চেয়ারপারসন একজন নারী। তিনি দীর্ঘ সময় দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু আপনার দলের ভেতরে নারীর প্রতিনিধিত্ব এখনো কম। একই সঙ্গে ঘোষিত শতকরা ৩০ ভাগ নারী প্রার্থী দেয়ার ঘোষিত লক্ষ্য পূরণ করতে পারেননি। এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?
উত্তর: দলে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর সব রকম প্রচেষ্টা নেবো আমরা। এটা আমাদের অগ্রাধিকার। এই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা।
ডিল্পোম্যাট ম্যাগাজিন থেকে অনুবাদ: মোহাম্মদ আবুল হোসেন