আহাদ চৌধুরী তুহিন,অমৃতালোক :
আজ বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ৬৩ লাখ বেকারের ৮৭ শতাংশ শিক্ষিত’-এটি দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬৩ লাখই বেকার। আর এই বেকারদের ৮৭ শতাংশই শিক্ষিত বেকার। আর ২১ শতাংশ বেকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও কোনো কাজে যুক্ত নন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ-২০২৩-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। জরিপের তথ্য বলছে, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণেরাই বেশি বেকার, যার সংখ্যা ৩৮ লাখ। তাঁরা কোনো কাজকর্ম না করেই বছরের পর বছর চাকরির পেছনে ছুটছেন।
এ বিষয়ে বিবিএসের উপপরিচালক আজিজা রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শ্রমশক্তি জরিপে এসডিজির সূচক, কর্মসংস্থান, বেকারত্ব ও শ্রমবাজার সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। জরিপে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বেকারত্ব কমেছে। তবে উচ্চ শিক্ষিত বেকার বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করি, সরকার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ অনুসারে, দেশে বর্তমানে ৬২ লাখ ৫৭ হাজার মানুষ বেকার রয়েছে। এই বেকারকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগ হচ্ছে, কাজ করতে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন এবং সক্রিয়ভাবে কাজ খুঁজছেন। এ রকম মানুষের সংখ্যা ২৬ লাখ ২৫ হাজার, যা মোট বেকারের ৪১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। দ্বিতীয় ক্যাটাগরি হলো, সব যোগ্যতা রয়েছে। তারপরও সপ্তাহে ৭ থেকে ৪০ ঘণ্টা কাজ করছেন। অর্থাৎ, যোগ্যতা ও চাহিদা অনুসারে কাজ করতে পারছেন না। এমন মানুষের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬১ হাজার, যার মোট বেকারের ৩৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এই ক্যাটাগরির উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, একজন স্নাতক পাস শিক্ষার্থী টিউশনি করছেন। সপ্তাহে ৬ ঘণ্টা কাজ করছেন। কিন্তু, তাঁর যোগ্যতা রয়েছে ৪৮ কিংবা ৫৬ ঘণ্টা কাজ করার।
তৃতীয় ক্যাটাগরি হচ্ছে, শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে, কিন্তু চাকরি খুঁজছেন না। কিংবা চাকরি খুঁজছেন, কিন্তু চাকরির জন্য অতিরিক্ত যোগ্যতা প্রয়োজন, যা তাঁর নেই। এ রকম বেকারের সংখ্যা ১১ লাখ ৭১ হাজার, যা মোট বেকারের ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত ১৫ বছরে দেশে কর্মসংস্থানহীন অর্থনীতির অগ্রগতি হয়েছে। এই সময়ে দেশের বিনিয়োগের পরিবর্তে টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এ কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়েনি। এ কারণে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে।
বিবিএসের এই জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেকার মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীরা। এরপরই রয়েছে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্নকারী এবং প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনো। বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম অশিক্ষিতদের মধ্যে। অর্থাৎ, যাঁরা পড়াশোনা করেননি, তাঁদের মধ্যে বেকার মানুষ কম।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় রাজনীতি ঢুকেছে, ফলে দিন দিন শিক্ষার মান কমছে। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব এবং কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষিত বেকার বাড়ছে।
দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পাতার খবর ‘লুট হওয়া অস্ত্র নিয়ে অপরাধে জড়াচ্ছে দুর্বৃত্তরা’। প্রতিবেদনে বলা হয়, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দোগাছি এলাকায় ঢাকা–মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস লেন থেকে গত ৩০ নভেম্বর শাহিদা আক্তার (২২) নামের এক তরুণীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শাহিদার ‘প্রেমিক’ তৌহিদ শেখ ওরফে তন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বলছে, ঢাকার ওয়ারী থানা থেকে লুট করা পিস্তল দিয়ে শাহিদাকে গুলি করে হত্যা করেন তৌহিদ। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়।
মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, গত ৫ আগস্ট ওয়ারী থানা থেকে লুট করার পর পুলিশের পিস্তলটি বাসায় লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে স্বীকার করেছেন তৌহিদ। প্রেম-বিয়েসংক্রান্ত ঝামেলার জেরে তিনি শাহিদাকে গুলি করে হত্যা করেন। তৌহিদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি এখন কারাগারে।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশের লুট হওয়া প্রায় দেড় হাজার আগ্নেয়াস্ত্র এবং আড়াই লাখের বেশি গোলাবারুদ এখনো উদ্ধার হয়নি। লুট হওয়া এসব অস্ত্র কিছু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ জেল পলাতক আসামি, দাগি সন্ত্রাসী, উগ্রপন্থী, চরমপন্থী, কিশোর গ্যাংয়ের হাতে চলে গেলে, সেটি হবে ভয়ের বিষয়।
প্রায় দেড় হাজার অস্ত্র উদ্ধার হয়নি
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানা-ফাঁড়িসহ পুলিশের নানা স্থাপনা থেকে ৫ হাজার ৭৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়। গোলাবারুদ লুট হয় ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৯টি। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, এসএমজি (স্মল মেশিনগান), এলএমজি (লাইট মেশিনগান), পিস্তল, শটগান, গ্যাসগান, কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, কাঁদানে গ্যাসের শেল, কাঁদানে গ্যাসের স্প্রে, সাউন্ড গ্রেনেড ও বিভিন্ন বোরের গুলি।
লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারে গত ৪ সেপ্টেম্বর যৌথ অভিযান শুরু হয়। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, এই অভিযানে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৫৬টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। তবে এখনো ১ হাজার ৪১৯টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২ লাখ ৬৩ হাজার ১৫৩টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে পালানো ৭০০ আসামি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ অপরাধীদের হাতে চলে গেছে। এ দুটি বিষয় জনমনে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা না গেলে, জেল পলাতক আসামিদের ধরতে না পারলে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সারা দেশে ৬৬৪টি থানা আছে। ৫ আগস্ট ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি, বক্সসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট-স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। এসব জায়গা থেকে পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ লুট হয়।
‘মাসে ভোক্তার পকেট লুট ৫১৩ কোটি টাকা’-এটি দৈনিক যুগান্তরের প্রথম পতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রেতার স্বার্থে নয়, ব্যবসায়ীদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে সরকার। ব্যবসায়ীদের কথামতো দুই ধাপে শুল্ককর কমালেও গত এক মাসে ভোজ্যতেলের দাম ভোক্তা সহনীয় করতে পারেনি। বরং দাম বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সয়াবিন তেল বাজার থেকে উধাও করেছেন। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে নিজেরাই বাড়িয়েছে দাম। সর্বশেষ সরকারিভাবে লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হলেও মাসব্যাপী ২৮ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি করেছে। এতে দেখা গেছে-মাসে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোক্তার পকেট থেকে প্রায় ৫১৩ কোটি টাকা লোপাট করেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা কঠোর পদক্ষেপ না নিয়ে ব্যবসায়ীদের দেখানো পথেই হেঁটেছে। এতে প্রতারিত হচ্ছে ভোক্তা। বুধবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, সরকারি হিসাবে বছরে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ২২ লাখ টন। এতে দেখা গেছে এক মাসে তেলের দরকার হয় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৩৩ টন। একদিনে তেল লাগে ৬ হাজার ১১১ টন। লিটার হিসাবে দিনে ৬১ লাখ ১১ হাজার ১১১ লিটার তেলের দরকার হয়। সেক্ষেত্রে লিটারে ২৮ টাকা বেশি দরে বিক্রি হলে, মাসে ভোক্তার পকেট থেকে লুট হয়েছে ৫১৩ কোটি টাকারও বেশি।
এদিকে এই টাকা লুট করেছে সেই চিহ্নিত ব্যবসায়ীরা বলে মন্তব্য করেছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন। তিনি যুগান্তরকে জানান, সরকারিভাবে দাম বাড়ানোর আগেই কোম্পানিগুলো এক মাস আগ থেকেই লিটারে প্রায় ২৮ টাকা বেশি দরে ভোজ্যতেল বিক্রি করেছে। সে হিসাবে ৫০০ কোটি টাকার বেশি টাকা মাসের ব্যবধানে ভোক্তার পকেট থেকে লুট করা হয়েছে। তবে বাস্তবে এই লুটপাটের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। কিন্তু সরকার ক্যাবের কথা শুনতে চায় না। আগে শেখ হাসিনার সরকারও শোনেনি। এবারের সরকারও শুনছে না। কিন্তু ঠকছেন ভোক্তা।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের কথা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের মূল্য বেড়েছে। এলসি করতে পারছে না। এ কথাগুলো ব্যবসায়ীরা আগের সরকারের আমলেও বলতেন। তবে সয়াবিন তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কয়েকদিন আগে অল্প পরিমাণে বেড়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা যে পরিসংখ্যান ট্যারিফ কমিশনে দিচ্ছে, তারা সেটা মেনে নিচ্ছে। যাচাই করছে না। তাই মূল্য বৃদ্ধির আগে গণমাধ্যমকর্মী ও ক্যাবের প্রতিনিধি থাকা দরকার। কিন্তু ব্যবসায়ী ও ট্যারিফ কমিশন মিলে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রথম পাতার খবর ‘৩০০ আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত জামায়াতের’। প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্য দলগুলো যেখানে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সামনের নির্বাচনে জয়ী হতে তৎপর। কোনো কোনো দল যেখানে নির্বাচন নিয়ে এখনো ভাবনার মধ্যে সময় পার করছে, সেখানে এ দলটি অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে কাজকর্ম। কারো ওপর ভর করে নয়, একা নির্বাচন করতে ৩০০ আসনেই প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত করেছে দলটি। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে প্রার্থীদের নামের তালিকাসহ জামায়াতের নির্বাচনী প্রস্তুতি, তাদের অর্থের উৎসসহ বিভিন্ন বিষয়ের বিশদ একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান সিলেট-১, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনা-৫, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান রাজশাহী-১, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের কুমিল্লা-১১, আ ন ম শামসুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন বলে তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জামায়াতের পক্ষ থেকে এসব প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচারণা-গণসংযোগ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে নিজ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন প্রার্থীরা। জামায়াত প্রার্থীদের বায়োডাটা (জীবনবৃত্তান্ত) সংগ্রহ করার পাশাপাশি তাদের আয়ের উৎস খুঁজে বের করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া নির্বাচনে দলটি ‘ডামি প্রার্থী’ দিলে তাদের বিষয়েও খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। তবে বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তবে প্রতিবেদনটির নথি নম্বর উল্লেখ করে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, এটি সরকারি সংস্থার প্রতিবেদন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।
দৈনিক সমকালের প্রথম পতার খবর ‘সাম্প্রদায়িক যোগসূত্র মেলেনি ৯ মৃত্যুর আটটিতে’। প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর হামলায় ৪ আগস্ট নিহত হন হবিগঞ্জ সদরের রিপন চন্দ্র শীল। তাঁর ছোট ভাই শিপন চন্দ্র শীল আগের দিন পুলিশের গুলিতে আহত হন। অভ্যুত্থানে শহীদের সরকারি তালিকায়ও আছে রিপন শীলের নাম। তবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের তালিকায় রিপন শীলকে সংখ্যালঘু নিপীড়নে নিহত দাবি করা হয়েছে।
গত ১১ অক্টোবর পৌর শহরের অনন্তপুর আবাসিক এলাকার রিপনের বাসায় গিয়েছিলেন সমকালের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি। সেদিন তাঁর মা রুবী রানী শীল, বোন চম্পা শীল এবং ভাই শিপন শীল নিশ্চিত করেছিলেন, শেখ হাসিনার পতন ঘটানোর আন্দোলনে অংশ নিয়ে রিপন শীল প্রাণ হারান।
হবিগঞ্জ ছাত্রদল সভাপতি শাহ রাজিব আহমেদ রিংগন সমকালকে বলেন, রিপন শীল ছিলেন বিএনপিকর্মী। ৪ আগস্ট বিকেলে হামলাকারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হাজার হাজার আন্দোলনকারীর প্রতিরোধে টিকতে না পেরে তৎকালীন এমপি আবু জাহিরের বাসায় অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারীরা বাসাটি ঘেরাওয়ের সময় রিপন শীল ছিলেন সামনের সারিতে। আবু জাহিরের বাড়ি থেকে ছোড়া গুলিতে তিনি শহীদ হন।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পরিসংখ্যানে ৪ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনা ২ হাজার ১০টি। হত্যাকাণ্ড হয়েছে ৯টি। ভুক্তভোগী পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। আটটি হত্যায় সাম্প্রদায়িক সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, রাজনৈতিক সংঘর্ষ, জমি ও টাকা নিয়ে বিরোধ, পূর্বশত্রুতার জেরে নিহত হয়েছেন ছয়জন। থানা ঘেরাওয়ের সময় জনতার পিটুনিতে নিহত হয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। হৃদরোগে মারা গেছেন একজন। আরেকজনের খুনের কারণ এখনও অজানা। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে আটটি।
ঐক্য পরিষদের তথ্য সংগ্রহ ও মনিটরিং সেলের সদস্য সচিব মনীন্দ্র কুমার নাথ সমকালকে বলেন, আগস্টে দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিল না। সাংগঠনিকভাবে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা একসঙ্গে করে তালিকা করা হয়েছে। আমরা তদন্ত সংস্থা না। সত্য কী, সরকার তদন্ত করে দেখুক।
অভ্যুত্থানে শহীদ রিপন শীলকে কেন সংখ্যালঘু নির্যাতনে নিহত দাবি করা হলো– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ৪ থেকে ২০ আগষ্ট পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের যারা নিহত হয়েছেন, তাদের নাম রাখা হয়েছে এই তালিকায়।
‘মালয়েশিয়ায় ২৬ হাজার প্রবাসী পাসপোর্ট সমস্যায়’-এটি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, সময়মতো পাসপোর্ট নবায়ন না হওয়ার কারণে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা ২৬ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর প্রবাস জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদের অনেককেই দেশে ফিরে আসতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনের গাফিলতির কারণেই এসব পাসপোর্ট নবায়ন হচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভািগের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
তারা বলছেন, বাংলাদেশ হাইকমিশনের পাসপোর্ট ও ভিসা বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা দালালচক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আবেদনের পর কয়েক মাস কেটে গেলেও তারা পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। তবে প্রবাসীদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে দেওয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আইন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এক ভিডিও পোস্টে তিনি এ কথা জানান। সেখানে তিনি বলেন, প্রবাসীদের এমআরপি পাসপোর্টে খুবই সমস্যা হচ্ছে এটা আমরা জানি। এই ১৫ ডিসেম্বর থেকে আপনারা এমআরপি পাওয়া শুরু করবেন এবং পরবর্তী তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যেকে যারা এমআরপির আবেদন করেছেন তারা পেয়ে যাবেন।
আসিফ নজরুল বলেন, সমস্যা তৈরি হয়েছে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে। তত্কালীন যে মন্ত্রী ছিলেন উনি পাসপোর্ট ছাপানোর কাজটা ওনার একটা পরিচিত কোম্পানিকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সেই প্রক্রিয়ার জন্য দেড় বছর সময়ক্ষেপণ হয়। আমরা আসার পর ঐ পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করে সমস্যা সমাধানে একটু সময় লেগেছে। মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠায়। এই রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখলেও হাইকমিশনের পাসপোর্ট বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারিত হয়ে আসছেন তারা। এসব প্রতারণা দূর করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার উদ্যোগে পাসপোর্ট সেবা প্রদানের জন্য আউটসোর্সিং কোম্পানি ইএসকেএল-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের দায়িত্ব হলো—অ্যাপয়েনমেন্ট, অ্যাপ্লিকেশন, ব্যাংকিং ও বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্ট সেবা প্রদান করা। ইএসকেএল তাদের পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীলতার জন্য সেবা গ্রহণকারীদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। মাত্র ৩২ রিংগিতের বিনিময়ে ই-পাসপোর্ট সেবা দিয়ে থাকে ইএসকেএল। অথচ এখনো পাসপোর্ট করে দেওয়ার কথা বলে দালালেরা প্রবাসীদের কাছ থেকে ৩০০-৫০০ রিংগিত হাতিয়ে নিচ্ছে নানা অজুহাতে।
আবুল কাশেম নামের এক বাংলাদেশি প্রবাসী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার চলে গেলেও তাদের ক্ষমতার দাপট এখনো মারয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনে থেকে গেছে। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাই।
নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট না পাওয়া এবং অসাধু কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্য ও হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশে হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেন, সরকার উত্সাহ দিচ্ছে এমআরপি থেকে ই-পাসপোর্টে উত্তরণে। আমরাও সেটাই করছি। জরুরি কারণ ছাড়া আমরা এমআরপি করতে নিরুত্সাহিত করছি।
ডিপ্লোম্যাটের বিশ্লেষণ নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রথম পাতার সংবাদ ‘বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী আদর্শের উত্থানে যেভাবে কাজ করছে বিজেপি’। প্রতিবেদনে বলা হয়, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে যাতে ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রতীক ও স্লোগান জনপ্রিয়তা পায় সে টার্গেট নিয়ে কাজ করছে দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর দিন গত ৯ আগস্ট, হিন্দু ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা, শাহবাগ চত্বরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় নেমে আসে। তারা ৫-৮ আগস্টে হিন্দুদের বাড়ি, ব্যবসা এবং উপাসনালয়কে লক্ষ্য করে কথিত আক্রমণের প্রতিবাদ জানায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম দি ডিপ্লোম্যাটের বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের মতো বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংখ্যালঘু অধিকার সংগঠনগুলোর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় জড়ো হয়েছিল। নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে স্লোগান দেয়ার সময়, সেখানে কয়েকজন ছিল যারা ‘জয় শ্রী রাম’ (রামের বিজয়), ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী শক্তির সাথে যুক্ত একটি বিতর্কিত স্লোগান উচ্চারণ করে।
১১ আগস্ট, বিক্ষোভের তৃতীয় দিনে, একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ (বিএইচজেএম) গঠিত হয় এবং নীহার হালদার, জুয়েল আইচ আরকো, জয় রাজবংশী, রনি রাজবংশী এবং প্রদীপ কান্তি দে-এর সমন্বয়কারী এবং মূল মুখপাত্র হিসেবে আবির্ভূত হন। একই দিনে বিএইচজেএম-এর ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামটি কৌতূহলজনকভাবে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ (BHJM), ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) এর আদর্শিক-সাংগঠনিক পিতা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (RSS) এর সহযোগী। অনেক (BHJM) নেতাও বিজেপিতে কাজ করেছেন। বিএইচজেএমই ছিল প্রথম ভারতীয় সংগঠন যারা বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় একটি সমাবেশ করেছিল ইউনূসের শপথ নেয়ার আগেও।
বাংলাদেশে এর পরের সপ্তাহগুলোতে, ঐতিহ্যগত সংখ্যালঘু অধিকার সংগঠনগুলো পটভূমিতে ফিরে যায়, যখন নতুন প্ল্যাটফর্ম, ইঐঔগ, প্রাধান্য পায়। এর মূল সংগঠকরা সবাই বাংলাদেশ হিন্দু ছাত্র মহাজোট এবং হিন্দু যুব মহাজোটের সাথে জড়িত ছিল, যা বাংলাদেশ জয়তো হিন্দু মহাজোটের (বিজেএইচএম) ছাত্র ও যুব শাখা। BJHM হলো একটি হিন্দু অধিকার সংগঠন যেটি ঢাকায় ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংগঠনটিই বাংলাদেশে হিন্দুত্বের শিকড় খুঁজে বেড়ায়।
বিজেপি এবং বিএইচজেএমসহ আরএসএস এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে একত্রে সঙ্ঘ পরিবার বা আরএসএস পরিবার বলা হয়। তাদের স্বঘোষিত মতাদর্শ হলো হিন্দুত্ব, যাকে তারা ‘হিন্দু সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ হিসাবে বর্ণনা করে। তারা একে জাতীয়তাবাদ বললেও তা ভারতীয় জাতির বর্তমান ভৌগোলিক সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়। আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার, নেপাল ও তিব্বত থেকে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত বিস্তৃত একটি কল্পিত সত্তা অখণ্ড ভারত বা অবিভক্ত ভারতকে পুনরুদ্ধার করার ধারণাকে সঙ্ঘ পরিবার প্রচার করে।
দ্য ডেইলি স্টারের প্রধান শিরোনাম ‘Tension, fear on Teknaf frontier’ অর্থাৎ ‘টেকনাফ সীমান্তে উত্তেজনা ও আতঙ্ক’।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আরাকান আর্মির রাখাইন রাজ্য দখল ও বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসার খবরে কক্সবাজারের স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নিরাপত্তাজনিত কারণে টেকনাফ ও মিয়ানমারের মধ্যবর্তী নাফ নদীতে যান চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন।
স্থানীয় সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমেদ বলেন, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের মধ্যে মানুষ ও বিভিন্ন বহনকারী নৌকা গতকাল চলাচল করেনি।
আজই সেই বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।