আহাদ চৌধুরী তুহিন,অমৃতালোক :
আজ বৃহস্পতিবার ( ৫ ডিসেম্ভর )দৈনিক যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম ‘সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ঐকমত্য’। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতাদর্শ ভিন্ন হতে পারে, মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশবাসীর ওপর চেপে বসা জগদ্দল পাথর সরেছে। এটা যাদের পছন্দ হয়নি, তারা এখন আমাদের দেশের বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তারা অভ্যুত্থানের মতো অর্জনকে মুছে দিতে চায়। এ পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেছেন দেশের সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে তারা একসঙ্গে আছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপে এ ঐকমত্যের কথা উঠে আসে। শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার যড়যন্ত্র চলছে। দেশের বিরুদ্ধেও চলছে ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যের জরুরি। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলেন, বাংলাদেশকে দুর্বল, শক্তিহীন, নতজানু ভাবার কোনো অবকাশ নেই। আমাদের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরিবর্তনকে ভারতের শাসকগোষ্ঠী এখনো মেনে নেয়নি। পতিত ফ্যাসিবাদের পরাজয়কে ভারত সরকার নিজেদের পরাজয় হিসাবে বিবেচনা করছে। সংলাপে তিনটি বিষয় আলোচনায় অগ্রাধিকার পায়। এগুলো হলো-বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার, ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং তাদের অধিকার নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বুধবার জাতীয় ঐক্য নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দল, এবি পার্টি, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণঅধিকার পরিষদসহ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশ নেন। তবে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও এলডিপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আলোচনা হয়। সংলাপ শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এর আগে মঙ্গলবার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আজ ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, সংলাপে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের প্রতি ভারতের অর্থনৈতিক নিপীড়ন, সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ, অভ্যন্তরীণ ও রাজনৈতিক বিষয়ে নাক গলানোর চেষ্টার নিন্দা জানান।
‘জাতীয় সরকারের গুঞ্জন’-এটি দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, দেশে বিরাজমান নানা সংকট নিরসনে জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে ছাত্রনেতা, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগের কথা জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। ওই দিন সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক হয়। গতকাল বুধবার হয়েছে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে।
আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা বসবেন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে। গত সপ্তাহেও প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং বিভিন্ন সংকট নিরসনে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান। এই পরিস্থিতিতে গুঞ্জন, নির্বাচনের আগেই জাতীয় সরকার গঠন হতে পারে। এ ক্ষেত্রেও অন্তর্বর্তী সরকার বহাল এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা থাকবেন।
উপদেষ্টা পরিষদে পরিবর্তন এনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া এবং উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে।
গতকালের বৈঠক সম্পর্কে সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সবাই মিলে একটি সমাবেশ করা, সবাই মিলে একটি ‘পলিটিক্যাল’ কাউন্সিল করা, নিরাপত্তা কাউন্সিল করাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব এসেছে।
বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপপ্রচার মোকাবেলায় আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করব।…আমরা কারো পাতা ফাঁদে পা দেব না।
কারো কাছে মাথা নত করব না, আবার সীমা লঙ্ঘনও করব না। দু-এক দিনের মধ্যে সুখবর পাবেন আশা করি।’ গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মনে করি, সামনে আরো নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। এগুলো মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তাব ছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর অংশীজনদের নিয়ে আগামী দুই বছরের জন্য জাতীয় সরকার গঠন এবং দেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য আগামী ছয় মাসের জন্য সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা। একই সঙ্গে ঐক্যবদ্ধতার প্রতিফলন হিসেবে জাতীয় পতাকা অথবা শান্তির পতাকা নিয়ে কর্মসূচি পালন করা।
গতকাল বিকেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক জোট আয়োজিত আলোচনাসভায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অচিরেই জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা চাচ্ছি। জাতীয় সরকারের মাধ্যমেই খুনি হাসিনার কাছে স্পষ্ট বার্তা যাবে। রূপরেখা দেওয়ার মাধ্যমেই বর্তমান পরিস্থিতি ৮০ শতাংশ নিরসন হবে।’
এদিকে দ্রুত নির্বাচনের এবং নির্বাচন-পরবর্তী জাতীয় সরকার গঠনে বিএনপি তাদের আগ্রহের কথা জানিয়ে আসছে। জামায়াতে ইসলামীও দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে এ বিষয়ে বলেন, জাতীয় সরকারের চেয়ে এখন জাতীয় নির্বাচন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের পর বিএনপি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠনের পক্ষে।
কিন্তু নবগঠিত নির্বাচন কমিশন বাড়ি বাড়ি গিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে ভোটার তালিকা করার যে সময়ের কথা জানিয়েছে, তাতে ওই ভোটার তালিকা নিয়ে নির্বাচন হতে পারে ২০২৬ সালে। এ অবস্থায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদায়ও পরিবর্তন আসতে পারে বলে একটি পক্ষ মনে করছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে পলায়নের পর দেশের দায়িত্ব নেয় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তখন থেকেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে বেশ সরব ভূমিকায় রয়েছে ভারতের গণমাধ্যম, যা অতিরঞ্জিত এবং সংঘবদ্ধ অপপ্রচার বলে প্রমাণ হচ্ছে। সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ভারতের আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দুর্বৃত্তরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আগুন ধরিয়ে দেয়; যদিও গত সোমবারের এই হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সার্বিক এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করছে।
দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পাতার খবর ‘চার শুল্ক স্টেশনে বাণিজ্য বন্ধ’। প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমান্তের ওপারে বিক্ষোভের জের ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চারটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে দেশের প্রধান স্থলবন্দরগুলো দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারত ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখায় স্থলবন্দরগুলোর ইমিগ্রেশন দিয়ে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী পারাপার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
বন্ধ হয়ে যাওয়া শুল্ক স্টেশনগুলো হচ্ছে মৌলভীবাজারের চাতলাপুর ও বটুলি এবং সিলেটের জকিগঞ্জ ও শেওলা। গত ২৭ নভেম্বর থেকে চাতলাপুর ও ২৮ নভেম্বর বটুলি স্থল শুল্ক স্টেশনে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। গত সোমবার থেকে বন্ধ আছে জকিগঞ্জ ও শেওলার কার্যক্রম।
এদিকে ৫ আগস্টের পর স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে পণ্য আমদানি কমেছে। তবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে। দেশের নয়টি স্থলবন্দরের চলতি বছরের শেষ চার মাসের (আগস্ট থেকে নভেম্বর) সঙ্গে গত বছরের একই সময়ের তথ্য তুলনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশে ঘোষিত ২২টি স্থলবন্দর আছে। যার ১৬টি কার্যকর। এর মধ্যে বর্তমানে ১১টি স্থলবন্দরের কার্যক্রম চলমান আছে। বাকি ৫টিতে বিভিন্ন সময় ধরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ আছে। এগুলোর কোনোটিতে শুধু আমদানি আবার কোনোটিতে শুধু রপ্তানি কার্যক্রম চলত। এর বাইরে প্রায় অর্ধশত শুল্ক স্টেশন রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমেও দুই দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলে।
দেশের অন্যতম নয়টি স্থলবন্দরের কাস্টমস থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের চার মাসে ৯টি স্থলবন্দর দিয়ে ৭৭ কোটি ৪৩ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এ বছর সেটি কমে ৫৯ কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টনে পৌঁছেছে। চলতি বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১৭৬ কোটি ৬৭ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছর রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ ছিল ২৮ কোটি ৯৩ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন।
নয়টি স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন দিয়ে চলতি বছরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৮ লাখ ৯২ হাজার ১১৭ জন যাতায়াত করেছেন। গত বছর একই সময়ে দুই দেশে যাতায়াতকারী মানুষের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ১৩ হাজার ৯১৫। এই স্থলবন্দরগুলো হচ্ছে আখাউড়া, বাংলাবান্ধা, হিলি, বুড়িমারী, দর্শনা, বিলোনিয়া, নাকুগাঁও, বেনাপোল ও ভোমরা।
দৈনিক সমকালের প্রথম পাতার খবর ‘ভীতি ছড়াচ্ছে লুণ্ঠিত অস্ত্র, জেল পালানো আসামি’। প্রতিবেদনে বলা হয়, থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুণ্ঠিত ১ হাজার ৪১৯ আগ্নেয়াস্ত্র আর ২ লাখ ৬৩ হাজার ১৫৩ রাউন্ড গুলির নেই খোঁজ। জেল পালানো দাগি অন্তত ৭০০ আসামি এখনও ‘নিখোঁজ’। এত সংখ্যক অস্ত্র-গুলির হদিস না পাওয়া আর আসামি ধরতে না পারায় জনমনে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তা শঙ্কা। এর মধ্যেই চিহ্নিত অপরাধীরা লুট করা অস্ত্র ব্যবহার করে একের পর এক অপকর্ম করেই যাচ্ছে।
সর্বশেষ মুন্সীগঞ্জের শ্রীপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে সাহিদা ইসলাম নামে এক তরুণীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর বেরিয়ে আসে, ৫ আগস্ট রাজধানীর ওয়ারী থানা থেকে লুট করা অস্ত্রে গুলি চালিয়ে সাহিদাকে হত্যা করেন তৌহিদ। এর আগে মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পেও একাধিকবার আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মহড়া দেয় মাদক কারবারিরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, কাঠামো দেখে বোঝা যায়, বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র ছিল লুণ্ঠিত।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘিরে দেশের বিভিন্ন থানা-ফাঁড়িতে হামলা ও লুট হয়। পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য বলছে, সব মিলিয়ে লুট করা হয় ৫ হাজার ৭৫০ অস্ত্র । গোলাবারুদ লুট হয়েছে ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৯ রাউন্ড। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত যৌথ অভিযানে ৪ হাজার ৩৩১টি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। তবে এখনও বেহাত ৭.৬২ বোরের ১২৯টি রাইফেল, ৩০টি এসএমজি, চারটি এলএমজিসহ বিভিন্ন ধরনের ১ হাজার ৪১৯ আগ্নেয়াস্ত্র। এ ছাড়া ৫ আগস্ট গণভবন থেকে নিরাপত্তা সংস্থা এসএসএফের বেশ কিছু স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র খোয়া যায়।
এদিকে অস্ত্র উদ্ধারে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় যৌথ অভিযান। ওই অভিযান এখনও চলছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বেহাত অস্ত্র দ্রুত জব্দ করাই অভিযানের মূল লক্ষ্য।
‘পালিয়ে যাওয়া ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক’-এটি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশব্যাপী সহিংসতা ও সরকার পতনের উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে দেশের কয়েকটি কারাগারে বিশৃঙ্খলা করেন বন্দিরা। বাইরে থেকে কোনো কোনো কারাগারে চালানো হয় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। এই পরিস্থিতিতে কারাগারগুলো থেকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন, বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিসহ বিচারাধীন মামলার ২ হাজার ২০০ বন্দি পালিয়ে যায়, যার মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনকে গ্রেফতারের পর ফের কারাবন্দি করা হলেও এখনো ৭০০ বন্দি পলাতক রয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর বকশীবাজারের কারা অধিদপ্তরের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।
কারা মহাপরিদর্শক জানান, পলাতক বন্দিদের মধ্যে ৭০ জন জঙ্গি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও শীর্ষ সন্ত্রাসী রয়েছে। এছাড়া আন্দোলনের পর ১১ জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেয়েছে। এ ছাড়া, দেশের ৬৯টি কারাগারের মধ্যে ১৭টি কারাগার এখনও ঝুঁকিপূর্ণ।
পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ কারাগার সংস্কার দরকার জানিয়ে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, বর্তমানে দেশে মোট ৬৯টি কারাগার রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি কারাগার অনেক পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার বিষয়গুলো জানে, এগুলো দ্রুত সংস্কার, মেরামত ও পুনর্নির্মাণ দরকার।
তিনি বলেন, কারাগারে সব সময় ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি থাকে। ধারণা ক্ষমতা ৪২ হাজার। ৫ আগস্টের আগে বন্দি ছিল ৫৫ হাজার। যদিও পরবর্তী সময়ে সেই সংখ্যা কমে গিয়েছিল। এখন আবার গ্রেফতার চলছে। ফলে বন্দির সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী, এখন যার সংখ্যা ৬৫ হাজার।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, কোনো আসামিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার পর আর কোনো দায় থাকে না কারা কর্তৃপক্ষের। কোনো কয়েদিকেই অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। আর যারা ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য, তাদের তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
‘খাদ্যশস্যের সরকারি বিতরণ বাড়েনি, মজুদ কমেছে ৩৯.৭৫%’-এটি দৈনিক বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অংশ হিসেবে সরকারিভাবে টিসিবি, ওএমএসসহ বেশকিছু কার্যক্রমের আওতায় খাদ্যশস্য (চাল ও গম) বিতরণ করে থাকে সরকার। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রায় প্রথম পাঁচ মাস (১ জুলাই থেকে ২৩ নভেম্বর) সময়ের মধ্যে আগের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) একই সময়ের তুলনায় খাদ্যশস্য বিতরণ বাড়েনি। উল্টো তা হ্রাস পেয়েছে ৭১ হাজার ৩১৮ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকারি ভাণ্ডার থেকে খাদ্যশস্য বিতরণ হয়েছে ১২ লাখ ৯১ হাজার ৭৬৮ টন। আর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময় বিতরণ হয়েছে ১২ লাখ ২০ হাজার ৪৫০ টন।
বিতরণ না বাড়লেও দেশে সরকারি খাদ্যভাণ্ডারের মজুদ এখন দ্রুতগতিতে কমছে। গত চার মাসে দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ কমেছে ৩৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের প্রাক্কালে গত ৭ আগস্ট দেশে মোট খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল ১৮ লাখ ৯ হাজার ৮৫৭ টন। এর মধ্যে চাল ও গমের মজুদ ছিল যথাক্রমে ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৪ টন ও ৪ লাখ ১৬ হাজার ৬৯৩ টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন খাদ্যশস্যের মোট মজুদ নেমে এসেছে (৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদকৃত) ১০ লাখ ৯০ হাজার ৩১৪ টনে। এর মধ্যে চালের মজুদ রয়েছে ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৩৪১ টন। গমের মজুদ আছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩০৩ টন। সে অনুযায়ী, চার মাসে দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ কমেছে ৭ লাখ ১৯ হাজার ৫৪৩ টন।
প্রসঙ্গত, এখানে সরকারি মজুদ ধানকেও চালের আকারে মজুদের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ উৎস ও আমদানির মাধ্যমে চাল ও গম সংগ্রহ করে থাকে সরকার। খাদ্যশস্যের রাষ্ট্রীয় ভাণ্ডারে মজুদ টানা কমে আসার পেছনে প্রধানত সরকারিভাবে সময়মতো আমদানি করতে না পারাকে দায়ী করছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা। তাদের ভাষ্যমতে, দেশে গত কয়েক মৌসুমে খাদ্যশস্যের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে বলে বিগত সরকারের সময়ে বারবার দাবি করা হয়েছে। এর পরও দফায় দফায় চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। সে হিসেবে এবারো বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য আরো আগে থেকেই সরকারিভাবে আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ার সুযোগ ছিল।
দ্য ডেইলি স্টারের প্রথম পাতার খবর ‘DNA test finally cracks Harris Chy mystery’ অর্থাৎ ‘ডিএনএ পরীক্ষায় অবশেষে হারিস চৌধুরীর রহস্য উন্মোচন’।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ঢাকার সাভারের একটি মাদ্রাসার কবরস্থানে মাহমুদুর রহমান নামে দাফন করা লাশটি বিএনপি নেতা আবুল হারিস চৌধুরীর বলে প্রমাণিত হয়েছে। হাইকোর্টে জমা দেয়া ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন থেকে পরিচয়ের সত্যতা সম্পর্কে জানা গিয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৃতের ডিএনএ তার মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর সঙ্গে মিলেছে।
আদালতের আদেশের পর, চলতি বছরের ১৬ই অক্টোবর হারিসের লাশ উত্তোলন করা হয় এবং সিআইডির পরীক্ষাগারে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়।
আইনজীবী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিস তৎকালীন সরকারের রোষানল থেকে বাঁচতে রাজধানীর একটি বাসায় আত্মগোপন ছিলেন।
২০২১ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাহমুদুর রহমান নামে ঢাকায় ছিলেন ছিলেন হারিস চৌধুরী। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হারিসের নামে কোনো ডেথ সার্টিফিকেট দেয়নি, দিয়েছিল মাহমুদুর নামে।
দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রথম পতার খবর ‘গ্রাহকের স্বস্তি, ব্যবসায় অস্থিরতা’। প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক খাতে আস্থা ফেরাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে সর্বশেষ টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দিয়েছে। যদিও গভর্নরের সিদ্ধান্ত ছিল টাকা না ছাপানোর। এতে নতুন টাকা সরবরাহের পর দুর্বল ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরছে। তবে অস্বস্তি কাটেনি ব্যবসায়ীদের। উচ্চ-সুদহারের কারণে অস্থিরতা বিরাজ করছে শিল্প মালিকদের মধ্যে।
মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে কয়েক দফা নীতি সুদহার বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ক্রেডিট কার্ডের সুদও। যেটি কার্যকর হবে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে। এতে চাপ বাড়বে ব্যবহারকারীদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুদহার বাড়িয়ে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সরকারকে নিত্যপণ্যের বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে মনোযোগ দিতে হবে।
ব্যাংকগুলোতে দেখা যায়, চাহিদা মতো টাকা না পেলেও আগের মতো ফেরত যেতে হচ্ছে না অধিকাংশ গ্রাহককে। গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ছয় ব্যাংকে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর নিশ্চিত করে বলেছিলেন, ছয়টি দুর্বল ব্যাংককে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সহায়তা দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে আরও দেওয়া হবে। ডিসেম্বর থেকে কোনো গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা না পেয়ে ফেরত যাবেন না।