আহাদ চৌধুরী তুহিন,অমৃতালোক :
আজ সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দৈনিক সমকালের প্রধান শিরোনাম ‘বদনাম’ ঘোচাতে বিএনপি কঠোর, তবু চলছে অপকর্ম। প্রতিবেদনে বলা হয়, দল থেকে বহিষ্কার, মামলা করেও বিএনপি নেতাকর্মীর একাংশকে দখল, চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্যের মতো অপকর্ম থেকে ফেরানো যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বিএনপি নেতাকর্মীকে ইঙ্গিত করে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের কথা বললেও কাউকে ধরছে না পুলিশ। শাস্তির ক্ষেত্রে বিএনপিতেও দেখা যাচ্ছে দ্বৈতনীতি। তৃণমূলের নেতাদের অভিযোগ পাওয়ামাত্র সাজা দিলেও প্রভাবশালী অনেকের ক্ষেত্রে তেমনটা হচ্ছে না। আবার কিছু ক্ষেত্রে দলীয় কোন্দলে নেতারা একে অপরকে অপকর্মের অপবাদ দিচ্ছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্যের অসংখ্য অভিযোগ আসে। ভাবমূর্তি রক্ষায় কঠোর হয় বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একাধিকবার হুঁশিয়ারিও দেন।
একাধিক নেতার দাবি, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মতোই বিএনপিকে চাঁদাবাজ, দখলদারের দল হিসেবে দেখাতে অতিরঞ্জিত প্রচারণা চলছে। নির্বাচনে সুবিধা পেতে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী, অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্ব সামাজিক মাধ্যমে তা চালাচ্ছেন। বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি করায় উপদেষ্টারাও একই ভূমিকা নিয়েছেন। সম্প্রতি তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘সড়কে আগের মতো চাঁদাবাজি চলছে। এখন অন্য দল করছে।’
বিএনপি নেতাদের প্রশ্ন, সরকার চাঁদাবাজের পরিচয় জানলে ধরছে না কেন? তবে এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কেউ বক্তব্য দেয়নি। বহিষ্কার ও মামলা করলেও নেতাদের কেন ধরা হচ্ছে না– প্রশ্নে পুলিশের মুখপাত্র ইনামুল হক সমকালকে বলেন, অপকর্মে জড়িত কারও দল দেখা হচ্ছে না। মামলা থাকলে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলার আগেই ধরা হচ্ছে। তবে কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এ তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সমকালকে বলেন, নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রেই অতিরঞ্জিত। তবে যেসব ঘটনায় সত্যতা পাওয়া গেছে, শাস্তি হয়েছে। নেতাকর্মী ১৭ বছরের নির্যাতনের ক্ষোভ থেকে অনেকে ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও ছাড় দেয়নি বিএনপি।
বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে ১ হাজার ৩১ নেতাকে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ২০৩ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়েও অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনও শত শত নেতাকর্মীকে শাস্তি দিয়েছে। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার, দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশের বিরুদ্ধেই দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল।
বিএনপি নেতাকর্মী জানান, দখল ও চাঁদাবাজির মামলা হলেও দলে যারা প্রভাবশালী, তাদের শাস্তি হয়নি। অভিযোগ আসার পর ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটিই বিলুপ্ত করে দেয় বিএনপি। তবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের এক প্রভাবশালীর নেতার কিছুই হয়নি।
দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পাতার খবর ‘জনপ্রশাসনে এখনো অস্থিরতা’। প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে চার মাসে একের পর এক বিষয় নিয়ে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা লেগেই আছে। পদোন্নতি, পদায়নসহ নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের। নিয়মিত (রুটিন) কাজ ছাড়া নীতিনির্ধারণী বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোতে পারছে না প্রশাসন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে বঞ্চনার শিকার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, পদায়ন, পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নাগরিক সেবা সহজ করা, সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের গতি বাড়ানো ও দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে তেমন নজর দেওয়া হয়নি।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের একটি সুপারিশকে কেন্দ্র করে গতকাল রোববার প্রশাসনে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। বর্তমানে প্রশাসন থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান রয়েছে।
সংস্কার কমিশনের এই প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন কয়েক শ কর্মকর্তা। আবার অন্য ২৫টি ক্যাডারের জোট আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদও কমিশনের সুপারিশে ক্ষোভ জানিয়েছে। তারাও আন্দোলনে নামছে। আজ সোমবার কেন্দ্রীয়ভাবে বিবৃতি, এরপর কলমবিরতি, মানববন্ধন ও সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ফলে জনপ্রশাসনে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক কার্যক্রমে যদি কিছুটা ধীরগতি হয়, সেটা সাময়িক। স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে। তিনি মনে করেন, যেকোনো সরকারের সাফল্যের মাপকাঠি হচ্ছে নাগরিক সেবার মান বাড়ানো। বর্তমান সরকার নিশ্চয়ই সেদিকে নজর দিচ্ছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় ৮ আগস্ট। এ সরকারের সাড়ে চার মাসেও প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরেনি। মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, সাড়ে চার মাসে ৫৩৭ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সচিব করা হয়েছে ২৩ কর্মকর্তাকে। গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ১৭ জন। অতিরিক্ত সচিব ১৩৫, যুগ্ম সচিব ২২৮ এবং উপসচিব পদে পদোন্নতি পান ১৩৪ জন।
‘এনআইডি তথ্যভান্ডার থেকে বিসিসির সংযোগ বিচ্ছিন্ন’-এটি দৈনিক যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার থেকে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির দায়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলকে (বিসিসি) দেওয়া সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে সরকারি ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিও বাতিল করেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা টাকা দ্রুত সরকারি কোষাগারে জমা দিতে চিঠি দিয়েছে। রোববার বিকালে নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এনআইডির তথ্য সংশোধনে জমা তিন লাখ ৭৮ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করতে জানুয়ারি থেকে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেওয়া হবে। এর আগে সকালে নির্বাচন কমিশন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও চুক্তি বাতিলের তথ্য জানায়।
ইসির তথ্যভান্ডার থেকে সংযোগ নিয়ে কম্পিউটার কাউন্সিল ‘পরিচয় প্ল্যাটফর্ম’কে তা ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। ওই সংযোগ থেকে তথ্য নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে আসছে পরিচয় প্ল্যাটফর্ম। গতকাল ওই সংযোগ বন্ধ করায় পরিচয় প্ল্যাটফর্ম থেকে আর কোনো প্রতিষ্ঠান তথ্য পাবে না।
এ বিষয়ে এএসএম হুমায়ুন কবীর আরও বলেন, আমাদের ডাটা সেন্টার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে থাকি। আমাদের কিছু নিয়ম-কানুন আছে। আমরা ১৮৩টি প্রতিষ্ঠানকে চুক্তির ভিত্তিতে সেবা দিয়ে থাকি। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) সঙ্গেও আমাদের একটা চুক্তি ছিল। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, এনআইডি সার্ভারের তথ্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, সত্তা বা পক্ষকে হস্তান্তর করতে পারবে না। অথবা বিনিময়, বিক্রয় কিংবা অন্য কোনো পন্থায় দিতে পারবে না। এই শর্ত ছিল। কিন্তু বিসিসি সেটা লঙ্ঘন করেছে। এজন্য ইসি থেকে প্রথমে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন তারা কোনো জবাব দেননি, নীরব ছিলেন। পরে ৬ অক্টোবর ৩ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হলে বিসিসি একটা জবাব দেয়। তবে সুনির্দিষ্টভাবে যা জানতে চাওয়া হয়েছিল, তার উত্তর না দেওয়ায় ওই জবাব গ্রহণ করেনি ইসি। তারই ধারাবাহিকতায় চুক্তিটি বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের যে এপিআই (এনআইডি যাচাইয়ের লিংক) সংযোগটি ছিল সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
নাগরিকদের গোপনীয়তার শর্ত লঙ্ঘন করে ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রির বিষয়ে ৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ প্রকাশ করে যুগান্তর। ‘ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্যভান্ডার : রাষ্ট্রীয় সহায়তায় নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই সংবাদে উল্লেখ করা হয়, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্যভান্ডার থেকে অন্তত ৫ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপন তথ্য বিক্রি হয়েছে। তা নিয়েছে সরকারি-বেসরকারি দেশি-বিদেশি শতাধিক প্রতিষ্ঠান। তালিকায় আছে এনজিও-ও। এসব তথ্য বিক্রি করে আসছে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতি একজন ব্যক্তির তথ্যের জন্য ৫, ১০ ও ১৫ টাকা হারে আদায় করছে। বেসরকারি ওই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘পরিচয়’। ‘সরকারি ই-সেবা’ দেওয়ার নামে নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডারের ডেডিকেটেড সংযোগ এপিআই (অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস) নেয় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ওই সংযোগ ব্যবহার করেই জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বিক্রি করে আসছে পরিচয় প্ল্যাটফরম।’
এতে আরও বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশনও নাগরিকদের তথ্য-উপাত্তের গোপনীয়তা ও সুরক্ষা করেনি। বিসিসিকে তথ্যভান্ডারের মিরর কপি দিয়েছে। ফলে নাগরিকদের সব তথ্যই সরকারের হাতে চলে যায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন দুই কমিশনের সময়ে এসব তথ্য অন্যদের হাতে যায়। এসব প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিদায়ি আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন, সাবেক দুই নির্বাচন কমিশন, আইসিটি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।’
দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রথম পাতার খবর ‘মাদকে সয়লাব দেশ’। প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর স্থবিরতায় সারা দেশ মাদকে সয়লাব। গত চার বছরে দেশে অন্তত ৪০ লাখ মাদকসেবী বেড়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা এক কোটির বেশি। একটি পক্ষের ধারণা ই-সিগারেটের মাধ্যমেও মাদকসেবী বাড়ছে।
মাদকসেবীদের বেশির ভাগ তরুণ-তরুণী। দেশের ৩০ শতাংশ যুবকের মধ্যে বেশির ভাগই মাদকে জড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে দেশের বহু পরিবারে চলছে অশান্তি। এরই মধ্যে দেশের কয়েকটি জায়গায় মাদকাসক্ত সন্তানের অত্যাচার সাইতে না পেরে বাধ্য হয়ে মা-বাবা তাদের সন্তানকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন।
এমনকি সন্তানকে খুন পর্যন্ত করতে বাধ্য হয়েছেন এক বাবা। মাদক সহজলভ্য হওয়ায় স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নতুন শিক্ষার্থী জড়াচ্ছে মাদকে। এই ভয়াবহ অবস্থা নিরসনে সরকারের কাছে মাদক সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি উঠছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, মাদক বিশেষজ্ঞ, পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতার চিত্র পাওয়া গেছে।
হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক : বাংলাদেশে মায়ানমার থেকে ইয়াবা আর ভারত থেকে আসা ফেনসিডিলের বাজার বহু আগে থেকে। এর সঙ্গে নতুন নতুন মাদকও যুক্ত হচ্ছে, যা রোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী থানাগুলো জনতার রোষানলের শিকার হয়। এর পর থেকে বেশ কিছুদিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি মাদক কারবার অনেকটাই নির্বিঘ্ন করে এবং সারা দেশে সহজলভ্য হয় মাদক।
এখন হাত বাড়ালেই মিলছে নানা ধরনের মাদক। এই অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর অবস্থানের কথা জানানো হলেও মাঠে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর জুরাইনের নতুন রেললাইনের ওপর বসে থাকতে দেখা যায় ২৫-২৬ বছরের এক যুবককে। তাঁর কাছে আসেন আরেক যুবক। আগে থেকে বসে থাকা যুবক জানতে চান, ‘কিরে বাবা আনছস?’ সঙ্গে সঙ্গে ওই যুবক একটি প্যাকেট থেকে তিনটি ইয়াবা তুলে দেন বসে থাকা যুবকের হাতে। বসে থাকা যুবক বলতে থাকেন—‘বুঝলি, এখন আর একটায় হয় না। বেশি বেশি লাগে।’ বলেই মাদক নিয়ে আসা যুবকের দিকে এক হাজার টাকার নোট বাড়িয়ে দেন। বিক্রেতা যুবক ১০০ টাকার একটি নোট ফিরিয়ে দিয়ে বিদায় নেন। এ সময় এই প্রতিবেদক পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাঁরা ছিলেন বেপরোয়া। এ সময় রেললাইন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন অনেকে। কাউকেই পরোয়া করেননি তাঁরা। পরে মাদক গ্রহণকারী যুবক জানান, তিনি বাসের হেলপার। বছর দুয়েক আগে থেকে ইয়াবা খাওয়া শুরু করেছেন। এখন আর একটায় কাজ না হওয়ায় দিনে দুইটা করে খান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইয়াবা এখন ছাত্ররাও বিক্রি করে। যার কাছ থেকে ইয়াবা নিলাম সে কলেজে পড়ে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কয়েক দিন পর দেখবেন দোকানে দোকানে ইয়াবা বিক্রি হইতাছে।’
সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার অন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্রদের প্রতি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্নেহশীল। এই সুযোগে কিছু বখাটে শিক্ষার্থী প্রকাশ্যে রাজধানীর অলিগলিসহ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক সেবন করছে। আর ক্যাম্পাসেই মিলছে স্বল্পমূল্যে মাদক। পড়াশোনার সঙ্গে বিচ্ছেদও ঘটছে তাদের। নতুন নতুন শিক্ষার্থীও মাদকে জড়াচ্ছে। স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরাও কৌশলে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে কোকেন, গাঁজা, মদ, মারিজুয়ানা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হিরোইন, প্যাথিডিন, সিসা, এলএসডির মতো মাদকের বিস্তার ঘটাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রীদের মাঝেও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে মাদকের বিস্তার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুলিশি নজরদারি না থাকায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ভাইরাসের মতো মাদক ছড়িয়ে পড়ছে বলে কয়েকজন শিক্ষকের অভিযোগ। বড় ক্যাম্পাসগুলোতে বহিরাগতরা সন্ধ্যা হলেই মাদকের আসর বসায়।
রাজধানীর একটি কলেজের এক শিক্ষিকা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা আগের মতো সম্মান দেখায় না। আমাদের সামনেই সিগারেট, গাঁজা টানতে শুরু করে দেয়। কিছু বলাও যায় না। কিছু বললে অপমানিত হতে হয়।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারা দেশের শহরগুলোর অলি-গলি, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে নানা ধরনের মাদক। শিক্ষার্থীরা এক সময় রাখঢাক করে খেলেও এখন অনেকটা প্রকাশ্যে। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এ পর্যায়ে নিয়ে গেছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
‘পাঠ্যপুস্তক নিয়ে ষড়যন্ত্র ফাঁস’-এটি দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বিশাল ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে না দিয়ে বরং অযথা সময়ক্ষেপণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত করতে কলকাঠি নাড়তে চেয়েছিল একটি চক্র। তবে গতকাল রোববার সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের তৎপরতায় গোপন সেই সিন্ডিকেট ভেঙে গেছে। এ বিষয়ে গতকাল রাতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) এসে মুদ্রণ শিল্প সমিতিরি সিনিয়র ভাইস চেয়রাম্যান মো: জুনায়েদ আল মাহফুজ জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিতরণের নিয়ন্ত্রক ও তদারক সংস্থা এনসিটিবি শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের শুরুর দিনে পাঠ্যবই তুলে দিতে আগে থেকেই ছিল বেশ তৎপর। তবে বিগত আওয়ামী সরকারের দোসর এবং সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন প্রেস মালিক নানাভাবে পাঠ্যবই মুদ্রণ সংক্রান্ত কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করে আসছিল। বিশেষ করে কাগজের কৃত্রিম সঙ্কট এবং ব্যাংক থেকে অর্থ প্রাপ্তির বিষয়েও তারা অপপ্রচার চালাচ্ছিল।
এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সব পক্ষকে নিয়ে ডাকা বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করার আশ্বাস দেয়ার প্রেক্ষিতে প্রেস মালিকরা প্রতিশ্রুতি দেন যে তারা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকের সব বই এবং মাধ্যমিকের মূল তিনটি বই (বাংলা ইংরেজি ও গণিত) তারা দেবেন।
‘জটিল হচ্ছে ক্যাডারের বিরোধ’-এটি দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, উপসচিব পুলের কোটা নিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ভাবনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে বিরোধ ক্রমেই জটিল হচ্ছে। একত্র হওয়া ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কলমবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণার পাল্টা হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারও পুরোদমে মাঠে নেমেছে। গতকাল রোববার প্রশাসন ক্যাডারের কয়েক শ কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে নিজেদের দাবি জানিয়েছেন।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস করার দাবিতে এই অবস্থান করেন। এত কর্মকর্তার এভাবে অবস্থান নেওয়া নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
এই অবস্থানের পর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। তবে অন্য ২৫ ক্যাডারের সঙ্গে আর বৈঠক করবে না তারা। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কমিশন সুপারিশ নেবে।
উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোন ক্যাডার সার্ভিস কী সুবিধা পাবে বা না পাবে, সে বিষয়ে কথা বলা সংস্কার কমিশনের কাজ নয়। এখতিয়ারের বাইরে কথা বলে কমিশন আন্তক্যাডার বিতর্ককে উসকে দিয়েছে। এতে সরকার বেকায়দায় পড়তে পারে।
প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ২৫ ক্যাডারের এ বিরোধ ও পাল্টাপাল্টি অবস্থানের শুরু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর এক মন্তব্যের পর। ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে কমিশনের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি জানান, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করবেন তাঁরা। বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আন্তক্যাডার বিতর্ক নিরসনের দাবিতে কর্মসূচি পালনরত ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা সংস্কার কমিশনের প্রধানের ওই বক্তব্যের পর বক্তৃতা-বিবৃতিতে এর প্রতিবাদ জানান। প্রশাসন ক্যাডারও পাল্টা বক্তব্য-বিবৃতি দেয়। একপর্যায়ে আগামীকাল মঙ্গলবার সব অফিসে ১ ঘণ্টার কলমবিরতি এবং বৃহস্পতিবার নিজ নিজ কর্মস্থলের সামনে মানববন্ধনের কর্মসূচি দেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
এদিকে প্রশাসন ক্যাডারকে আলাদা করে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। গত দুই দিন তাঁরা ফেসবুকে নিজেদের প্রোফাইল পরিবর্তন করে একই লোগো যুক্ত করেন।
সচিবালয়ে নজিরবিহীন অবস্থান
গতকাল বেলা ১১টার পর সচিবালয় ও আশপাশে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সচিবালয়ের ৩ নম্বর ভবনের সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পূর্বঘোষণা
ছাড়াই চার শতাধিক কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় তলায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানের দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন। অবশ্য গত শনিবার রাতে প্রশাসন ক্যাডারের ব্যাচভিত্তিক গ্রুপগুলোতে এ কর্মসূচি জানানো হয় বলে কয়েকজন কর্মকর্তা জানান।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার উল্লাহ এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদসহ ১৫-২০ জন কর্মকর্তা ভবনের তৃতীয় তলায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের দপ্তরে যান। বেলা পৌনে ১টায় তিনি দপ্তরে গেলে তাঁর সঙ্গে আধা ঘণ্টা বৈঠক করেন তাঁরা। বেলা ২টা পর্যন্ত অবস্থান করেন কর্মকর্তারা।
প্রশাসন ক্যাডারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং সদস্যসচিব নিয়মিত চাকরিতে থাকলে এমন সুপারিশ করার চিন্তা করতেন না। তাঁরা দুজনেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করতে চান। এ জন্যই তাঁরা এ বিতর্ক উসকে দিয়েছেন।