আহাদ চৌধুরী তুহিন,অমৃতালোক :
আজ শুক্রবার ( ১৩ ডিসেম্বর) দৈনিক দেশরূপন্তরের প্রধান শিরোনাম ‘নতুন মাথাব্যথা মিয়ানমার সীমান্ত’। খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এতে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। গত মঙ্গলবার মংডু দখলের ফলে বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং আগে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যিক বিষয়েও বাংলাদেশের নতুন ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। এ অবস্থায় অপর প্রতিবেশী মিয়ানমার সীমান্তেও যে অস্থিরতা, তাতে নতুন সংকট তৈরি হলো। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ পর্যায়ে নিজেদের পক্ষ থেকেই নিরাপত্তা সতর্কতা জোরদার করা উচিত। একই সঙ্গে আরাকান আর্মির সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে হবে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাড়াতে হবে কূটনৈতিক তৎপরতা।
মিয়ানমার পরিস্থিতি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও পর্যবেক্ষণ করছে। রোহিঙ্গা সংকট ও সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার হাই-রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের মধ্যে এ নিয়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে।
মূলত মিয়ানমারে চলমান এ যুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা সহযোগী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি-এআরএ ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসাসহ কয়েকটি সংগঠনের অবস্থান ছিল জান্তা বাহিনীর পক্ষে। যে কারণে সীমান্তবর্তী আরাকান রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার ফলে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হলো।
এদিকে পশ্চিম অঞ্চলের জান্তা বাহিনীর কমান্ড হেডকোয়ার্টার দখলসহ রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি। মূলত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা বিদ্রোহী গোষ্ঠী ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সদস্য আরাকান আর্মি। এ গোষ্ঠী গত বছর অক্টোবর থেকে হামলা চালিয়ে উত্তরের শান রাজ্যের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আরাকান আর্মি গত বছর নভেম্বর মাস থেকে হামলা চালিয়ে রাখাইনের ১৭টি শহরের মধ্যে ১৩টির নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। আরাকান আর্মি এখন দক্ষিণ রাখাইনের গাওয়া, তাউনগুপ ও আন শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়াই করছে। ইতিমধ্যে আন শহরে ৩০টি জান্তা ঘাঁটি দখল করেছে আরাকান আর্মি। অন্য শহর অভিমুখেও এগিয়েছে বিদ্রোহী এ গোষ্ঠী। গত মঙ্গলবার মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করে আরাকান আর্মির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তুমুল লড়াইয়ের মুখে জান্তা বাহিনীর মিত্র হিসেবে পরিচিত আরাকান রোহিঙ্গা আর্মির রোহিঙ্গা মিলিশিয়া, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) বিরুদ্ধেও তারা হামলা চালিয়েছে। অব্যাহত হামলার মুখে তারাও ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়েছে।
‘আওয়ামী লীগের শীর্ষ ৭২ নেতার হদিস নেই’-এটি দৈনিক সমকালের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকেই আওয়ামী লীগের ৭২ কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও মেয়রের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। তারা রীতিমতো নিখোঁজ। তবে এদের মধ্যে দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা নিজেদের নির্বাচনী এলাকার কর্মীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছেন। টেলিফোনে তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কেউ কেউ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছেন। কিন্তু তাদের অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজ এসব নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে। খোঁজ পেলেই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করবে, এমনকি তাদের জনরোষের ভয়ও আছে।
ক্ষমতায় থাকাকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয় ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ‘খেলা হবে’ কিংবা ‘পালাব না’ ইত্যাদি বলে নিয়মিত গণমাধ্যমের শিরোনাম হতেন। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর কোথাও তাঁর উপস্থিতি টের পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে থাকা দলের নেতারা সমকালকে বলেছেন, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী দেশেই আছেন। ভারতে আত্মগোপনে থাকা নেতাদের দাবি, ওবায়দুল কাদের গত নভেম্বরে ভারতে গেছেন। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন– এমন আশঙ্কায় তিনি ভারতে আত্মগোপনে আছেন।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও ক্ষমতায় থাকাকালে দলের সাধারণ সম্পাদকের মতো প্রতিদিন গণমাধ্যমের শিরোনাম হতেন। বিরোধী দলের তীব্র সমালোচনা করে আলোচনায় থাকতেন। ক্ষমতাচ্যুতির পর দলের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও আত্মগোপনে চলে যান। তিনি দীর্ঘদিন চুপচাপ থাকার পর একটি গণমাধ্যমে নিজের অবস্থান জানান দিলেও কোথায় আছেন, তা স্পষ্ট করেননি। অনেকেই বলছেন, তিনি আছেন বেলজিয়ামে।
আওয়ামী লীগ শাসনামলের শেষের দিকে ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদের মতো গণমাধ্যমে সরব ছিলেন সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত। অভ্যুত্থানের পর আলোচিত দুই নেতার মতো তিনিও লাপাত্তা। এই তিন নেতার কারোর সঙ্গেই কর্মীদের যোগাযোগ নেই। তবে কয়েক দিন ধরে ফেসবুকে সরব হয়েছেন মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তবে তিনি কোথায় আছেন, সেটি কেউ জানেন না।
২৪ সাবেক মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রী লাপাত্তা
এ ছাড়া আরও কমপক্ষে ২৪ জন সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর খোঁজ নেই। তারা নির্বাচনী এলাকার কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন না। তাদের ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও সচল নয়। কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন বলেছেন, গ্রেপ্তার এড়াতে তারা আত্মগোপনে আছেন। তারা দেশে, নাকি বিদেশে আছেন– তাও স্পষ্ট নয়।
লাপাত্তা হয়ে থাকা সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি, সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান, সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার, সাবেক পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারা, সে সময়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার চাঁপা এবং সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান।
এই মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের মতো সাবেক রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসি এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খানেরও কোনো খবর নেই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগে রুমানা আলী টুসি ও ওয়াসিকা আয়েশা খান কানাডায় ছিলেন। তারা এখনও দেশে ফেরেননি। জিল্লুল হাকিম জাপান কিংবা ভারতে রয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
আরও তিনজন সাবেক মন্ত্রীরও কোনো হদিস নেই। তারা হচ্ছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম, সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। এই তিনের দু’জন বয়সজনিত কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না।
সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থান জানা গেছে। তাদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ভারতে আছেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ভারত হয়ে অন্য দেশে গেছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান, সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী লন্ডনে রয়েছেন।
প্রথম আলো
দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ‘মংডু আরাকান আর্মির দখলে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা’। প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ ১১ মাসের লড়াই-সংঘাতের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। গত রোববার দুপুরে মংডু টাউনশিপের দক্ষিণে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সর্বশেষ ৫ নম্বর সীমান্ত ব্যাটালিয়নটিও দখলে নেয় তারা।
মংডু আরাকান আর্মির দখলে চলে যাওয়ায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে দুই পারেই রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তাঝুঁকি বেড়েছে। রাখাইন রাজ্যে পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা আছে এখনো। তাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির বিরোধ আছে। রাখাইনের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হতে পারে। এমন আশঙ্কা থেকে বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
মংডু দখলে নেওয়ার পরপরই আরাকান আর্মি নাফ নদীতে নৌ চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে যাত্রীবাহী ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাচ্ছেন কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছটার বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট দিয়ে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, পাঁচ দিন ধরে নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্ট মার্টিনে খাদ্যসামগ্রীর মজুত কমে গেছে। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই জাহাজ বা কার্গো ট্রলার বাংলাদেশে আসতে পারছে না।
মিয়ানমারের মংডুর সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। নাফ নদীটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমানা ভাগ করে রেখেছে। রাখাইন রাজ্যের বিপরীতে বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফ-উখিয়া হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত ২৭০ কিলোমিটারে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ।
সীমান্তে কড়া পাহারা
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, আরাকান আর্মি মংডুর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে সেখানে গোলাগুলি বন্ধ আছে। মর্টার শেল, গ্রেনেড বিস্ফোরণও থেমে গেছে। তাতে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত মনে হলেও দুই পারের (টেকনাফ ও মংডু) সীমান্তজুড়ে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এত দিন ওপারের বিকট শব্দের বিস্ফোরণে কেঁপেছিল টেকনাফ সীমান্তের ২৩টির বেশি গ্রাম। মাঝেমধ্যে টেকনাফ সীমান্তের লোকজনের ঘরবাড়িতে এসে পড়ত ওপারের গুলি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে টেকনাফ, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত ঘুরে নাফ নদীর বাংলাদেশ জলসীমানায় বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল তৎপরতা চোখে পড়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হচ্ছে জানিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে কঠোর অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের কাউকে শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করা হবে না।
কালের কণ্ঠ
দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রথম পাতার খবর ‘মাথাপিছু ঋণ সোয়া লাখ টাকা!’। খবরে বলা হয়, সরকারি আর ব্যক্তি খাতের ঋণ মিলিয়ে এখন মাথাপিছু ঋণ বেড়ে হয়েছে সোয়া লাখ টাকা। বিগত আওয়ামী সরকারের নেওয়া অপচয়ের প্রকল্পের বাড়তি ব্যয় মেটাতে নেওয়া ঋণ আর ব্যক্তি খাতের ঋণ মিলিয়ে এত বড় ঋণের বোঝা পড়েছে ব্যক্তির ঘাড়ে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে। এতে আরো জানা যায়, সরকারি খাতের মাথাপিছু ঋণ এখন এক লাখ সাত হাজার টাকা।
তবে এক বছর আগে ছিল ৯৫ হাজার ২০ টাকা। বছরের ব্যবধানে ওই ঋণ ১১ হাজার ৯৮০ টাকা বেড়েছে। আর ব্যক্তি খাতের মাথাপিছু ঋণ ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা। সব মিলিয়ে বর্তমানে একজন ব্যক্তির মাথাপিছু ঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ৩৬৫ টাকা।
মাথাপিছু ঋণ হলো, বাজেটের ঘাটতি মেটাতে ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশ ও বিদেশ থেকে নেওয়া সরকারি ও বেসরকারি ঋণ। একজন নাগরিকের সেই ঋণের দায়ের অংশই গড় ঋণ। কারণ জনগণ দেশের মালিক। এই ঋণ জনগণকে প্রত্যক্ষভাবে চাপে না ফেললেও পরোক্ষভাবে ফেলে।
জনগণের কাছ থেকে নেওয়া করের টাকায় এসব ঋণ শোধ করতে হয়। যত ঋণ, সরকারের তত দায়। আর এ দায় মেটাতে করের হারও বাড়াতে হয়। যার বহুমুখী প্রভাব পড়ে ভোক্তার ওপর। অর্থ বিভাগের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের দেশি ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।
মার্চ ও জুন মাসের হিসাব এখনো প্রতিবেদন আকারে তৈরি করা হয়নি। তবে অর্থবিভাগ ধারণা করছে, চলতি বছরের জুন শেষে দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে দেশীয় ঋণ ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণ আট লাখ এক হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনার সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার জন।
মোট স্থিতি ঋণের সঙ্গে মোট জনসংখ্যা ভাগ দিলে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ছয় হাজার ৯৯৯ টাকা। এটি সরকারের ঋণের মাথাপিছু হিসাব।
এ ছাড়া বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, পরিবারের খরচ মেটাতে একজন ব্যক্তি গড়ে ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা ঋণ নিয়ে থাকে। ঋণগ্রস্ত পরিবারের গড় ঋণ এক লাখ ৮৭ হাজার ৩০৮ টাকা। এসব পরিবারের মানুষের গড়ে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ৪৩ হাজার ৯৬৯ টাকা। সে হিসাবে যদি সরকারের মাথাপিছু ঋণ এবং ব্যক্তিগত গড় ঋণের হিসাব একত্র করা হয়, তবে একজন ব্যক্তির গড় ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ২৪ হাজার ৩৬৫ টাকা।
‘ইউরোপগামী ৫ হাজার শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তায়’-এটি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের পাঁচ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর এবার উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ঢাকায় অবস্থিত মোট ৫১টি দূতাবাস ও হাইকমিশনের মধ্যে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্কসহ ইউরোপের মোট ১৩টি দূতাবাস রয়েছে। ফিনল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল, গ্রিসসহ ইউরোপের অধিকাংশ দেশের দূতাবাস ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। গত প্রায় চার মাস ধরে ভারতের ভিসা কার্যক্রম সীমিত। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ভারতের ভিসা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন।
শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছাড়া ভিসা দেবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো। ভিসা জটিলতার কারণে এসব শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইইউ রাষ্ট্রগুলোর ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় আনার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়েছেন।
গত সোমবার ইইউর কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ অনুরোধ করেন। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ইইউর ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার।
এমনিতেই বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ইউনেসকো, ফ্যাকড-ক্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট ৫২ হাজার ৭৯৯ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য বিদেশে যান। ২০২২ সালে ৪৯ হাজার ১৫১ জন এবং ২০২১ সালে ৪৪ হাজার ৩৩৮ জন শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গেছেন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা সংখ্যার দিক দিয়ে বাড়লেও জরিপের তথ্যমতে এখনো প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের তুলনায় কম। ভারত থেকে ২০২৩ সালে মোট ৫ লাখ ৮ হাজার ১৭৪ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যান। একই বছর নেপাল থেকে ৮৮ হাজার ৯০৪ জন শিক্ষার্থী এবং পাকিস্তান থেকে ৭১ হাজার ৮৬৫ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গেছেন।
বাংলাদেশ থেকে গত বছর সবচেয়ে বেশি ৮ হাজার ৫২৪ শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে যান। এছাড়া ৬ হাজার ৫৮৬ জন যুক্তরাজ্যে, ৫ হাজার ৮৩৫ জন কানাডায়, ৫ হাজার ৭১৪ জন মালয়েশিয়ায়, ৫ হাজার ৪৬ জন জার্মানিতে, ৪ হাজার ৯৮৭ জন অস্ট্রেলিয়ায়, ২ হাজার ৮২ জাপানে, ২ হাজার ৬০৬ জন ভারতে, ১ হাজার ২০২ জন দক্ষিণ কোরিয়ায় এবং সৌদি আরবে ১ হাজার ১৯০ জন উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ ছাড়েন। এছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যান প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী। এ বছরও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় উল্লেখযোগ্য-সংখ্যক শিক্ষার্থী বিদেশে যেতে পাচ্ছেন। তবে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অধিকাংশ দেশে শিক্ষার্থী যেতে পারছেন না।
উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপ যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অন্যান্য দেশের পাশাপাশি মূলত ফিনল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল, গ্রিস—এ চার দেশের ভিসার জন্য আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছে বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর কনসালটেন্সি এজেন্সিগুলোর একমাত্র সংগঠন ফ্যাকড-ক্যাব। কিন্তু এই চারটি দেশসহ ইউরোপের অধিকাংশ দেশের দূতাবাস ভারতে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এখন বিদেশি দূতাবাস ও হাইকমিশনের সংখ্যা প্রায় ৫১টি। আর অনারারি কনস্যুলেট অফিস রয়েছে আরো ৩৯টি দেশের। তবে সাধারণত কোনো অনারারি কনস্যুলেট অফিস ভিসা ইস্যু করে না। এই ৫১টি মিশনের বাইরে কোনো দেশের ভিসা নিতে হলে, দেশের বাইরে যেতে হয়। বিশেষ করে দিল্লিতে যেতে হয়। দিল্লিতে বিদেশি মিশনের সংখ্যা ১৫১টি। ফলে বেশির ভাগ দেশের ভিসা দিল্লি থেকেই নেওয়ার প্রয়োজন হয়।
‘আক্রান্ত বাড়ছে, কঠিন বাস্তবতায় দেশের ক্যান্সার রোগীরা’-এটি দৈনিক বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসিন্দা রাশেদা খাতুন। চল্লিশোর্ধ্ব এ নারী বছরখানেক ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত। নিয়মিতভাবে চিকিৎসাসেবা নিতে প্রতিবেশী দেশ ভারতে যেতেন। সম্প্রতি দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনে ভারতের ভিসা পেতে দীর্ঘসূত্রতা ও বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ভোগান্তি বাড়ায় রাশেদা খাতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশেই ক্যান্সারের চিকিৎসা নেবেন তিনি। কিন্তু এখানে চিকিৎসা সেবার মান ও ব্যয় সাশ্রয় নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগে ভুগছেন তিনি।
দেশে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক মানুষের ক্যান্সার রোগ ধরা পড়ছে। যদিও এর চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আবার চিকিৎসাসেবা ও সুবিধাও অপ্রতুল। এ কারণে প্রতি বছর ক্যান্সারের চিকিৎসাসেবা নিতে প্রতিবেশী ভারতে যাচ্ছেন আক্রান্তদের বড় একটি অংশ। সাম্প্রতিক সময়ে ভিসা নিয়ে জটিলতা বাড়ায় তাদের অধিকাংশই এখন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া শুরু করেছেন। তবে ক্যান্সার চিকিৎসায় দেশের হাসপাতালগুলোয় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল না থাকায় উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেই সঙ্গে ব্যয়বহুল এ চিকিৎসার খরচ জোগানো নিয়েও ভুক্তভোগীদের রয়েছে বড় ধরণের দুশ্চিন্তা।
দেশে প্রতি বছর কী পরিমাণ ক্যান্সারের রোগী শনাক্ত হচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা গবেষকরা। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের গবেষকদের করা জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি এক লাখে ১১৪ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। গবেষণাটিকে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনায় নিলেও দেশের মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৩০ লাখের মধ্যে ক্যান্সারের রোগী আছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ জন।
বিপুলসংখ্যক এ রোগীর দেশে চিকিৎসাসেবা দেয়ার মতো সক্ষমতা নেই সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর। ফলে ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ভারত, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের ওপর নির্ভরতা দিনে দিনে বেড়েছে।
দেশে ক্যান্সার চিকিৎসা ও সেবার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সম্মান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রুবাইয়ুল মুর্শেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ক্যান্সারের চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। একজন রোগী যে চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা শুরু করেন, তিনি ওই চিকিৎসকের কাছেই চিকিৎসা প্রক্রিয়া শেষ করতে চান। চিকিৎসার মাঝ পর্যায়ে চিকিৎসক পরিবর্তন করতে হলে নতুন চিকিৎসকের সঙ্গে মানিয়ে নেয়াসহ পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়। এছাড়া ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন রোগীকে মাঝ পর্যায়ে চিকিৎসক পরিবর্তন করতে হয়, তখন রোগীর মধ্যে মানসিক উদ্বেগ তৈরি হয়, যা চিকিৎসায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশে ক্যান্সারের রোগীদের বড় একটি অংশ চিকিৎসার জন্য বেছে নেন ভারতকে। ভিসা জটিলতায় এসব ভুক্তভোগী এখন বিপদে পড়েছেন। বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক।’
গ্লোবাল ক্যান্সার অবজারভেটরি তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ২০২২ সালে নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৭ জন। আর ওই বছর দেশের ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয় ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৮ জনের। আর ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে (২০১৮ সাল থেকে) বাংলাদেশে ক্যান্সার শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৭।
গ্লোবাল ক্যান্সার অবজারভেটরি ২০২২ সালে ক্যান্সার রোগী শনাক্তের তথ্য বিশ্লেষণে জানিয়েছে, ওই বছর বাংলাদেশে ক্যান্সার শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৯৪ হাজার ৯২২। আর নারী ৭২ হাজার ৩৩৪। আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল খাদ্যনালির ক্যান্সারে আক্রান্ত, যার সংখ্যা ২৫ হাজার ২৩২ বা মোট নতুন শনাক্তকৃত রোগীর ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। ঠোঁট বা মুখের অভ্যন্তরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ১৬ হাজার ৮৩ জন। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ১৩ হাজার জন, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ১২ হাজার ৯৮৯ জন, জরায়ু মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে ৯ হাজার ৬৪০ জন। এছাড়া অন্যান্য ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৯০ হাজার ৩১২।