আহাদ চৌধুরী তুহিন,অমৃতালোক :
আজ শনিবার (২১ ডিসেম্বর)দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রথম পাতার সংবাদ ‘নির্বাচনে আজীবন নিষিদ্ধ হতে পারেন আ. লীগের শীর্ষ নেতারা’। প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের প্রথম শ্রেণির নেতারা নির্বাচনে আজীবন নিষিদ্ধ হতে পারেন। ভোটার তালিকা থেকেও বাদ পড়তে পারেন তাঁরা। একই পরিণতি ঘটতে পারে আওয়ামী লীগের জোটভুক্ত কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতাদের ক্ষেত্রেও। গত শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদারের এক প্রতিবাদপত্রে এই ইঙ্গিত মিলেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ব্যাপক প্রাণহানি, অনেকের পঙ্গুত্ব, দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে গুমসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এবং সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান থেকেও আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্ভাব্য এই পরিণতির পক্ষে যুক্তি মিলছে।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না—প্রশ্নে গত বৃহস্পতিবার রংপুরে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছিলেন, ‘তাদের জন্য কোনো বাধা সৃষ্টি হয়েছে বলে আমি দেখছি না।’ পরে ওই দিন রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যম তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। এতে তিনি বলেন, এটি কারো অজানা নয় যে আইসিটি (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) আইনে এরই মধ্যে অনেক মামলা রজু হয়েছে শেখ হাসিনাসহ অনেক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।
হত্যা মামলাও করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচন কার্যক্রম নির্ভর করবে এসব মামলা সুরাহার ওপর। নির্বাচন কর্মকর্তারাও বলছেন, ‘আইসিটি আইনে কারো সাজা হলে তিনি আজীবন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। ভোটার তালিকা থেকেও বাদ পড়বেন।
আইসিটি প্রসিকিউটরদের বক্তব্য, নিউক্লিয়াস এবং সুপ্রিম কমান্ডারদের ব্যাপারে আমরা এখন উদ্যোগী, মনোযোগী। তাঁদের বিচারটাই আগে হবে।’ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর ১২ অনুচ্ছেদে যেসব কারণে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যাবে না, তা বলা আছে। এই অনুচ্ছেদের (ণ) উপ-অনুচ্ছেদে বলা আছে, কেউ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের অধীনে কোনো অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হলে তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে সংসদ নির্বাচনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা সম্পর্কে এই অনুচ্ছেদের (ঙ) উপ-অনুচ্ছেদে একই কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ভোটার তালিকা আইন, ১৩(ঘ) ধারায় ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তন সম্পর্কে বলা হয়েছে, কেউ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের অধীনে কোনো অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হলে ভোটার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ পড়বে। আবার ভোটার না হলে কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না।
আরো যেসব কারণে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যাবে না, তার মধ্যে রয়েছে নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে কেউ অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে থাকলে তাঁর মুক্তিলাভের তারিখ থেকে পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদেও এটি উল্লেখ আছে। এ ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২(ঘ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ৭৩, ৭৪, ৭৮, ৭৯, ৮০, ৮১, ৮২, ৮৩, ৮৪ ও ৮৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত নির্বাচনী অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে থাকলে তাঁর মুক্তিলাভের তারিখ থেকে পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে।
নির্বাচন কর্মকর্তাদের মতে, নির্বাচনী ও ফৌজদারি অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে ওই দণ্ডিত ব্যক্তি একসময় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা ফিরে পান। কিন্তু আইসিটি আইনে কেউ অপরাধী সাব্যস্ত হলে ‘সময় অতিবাহিত’ হওয়ার সুযোগ তাঁর জন্য প্রযোজ্য নয়।
দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম করের টাকা ‘অপব্যয়ের’ আরেক উদাহরণ। খবরে বলা হয়, গবাদিপশুর খাবার তৈরির সরকারি কারখানাটি উদ্বোধন করা হয়েছিল প্রায় দুই বছর আগে, ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি। সেদিন তৎকালীন প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছিলেন, প্রাণীর পুষ্টিকর খাবারের জন্য আর বিদেশনির্ভর হতে হবে না।
সাবেক মন্ত্রী এখন আত্মগোপনে। কারখানাটি চলেছিল ওই এক দিন, যেদিন তিনি উদ্বোধন করেছিলেন। তার পর থেকে বন্ধ। বাণিজ্যিকভাবে কারখানাটি কবে চালু হবে, কোনো দিন চালু হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। যদিও ইতিমধ্যে ব্যয় হয়ে গেছে ৩৩ কোটি টাকা।
কারখানাটি ঢাকার সাভারে। নির্মাণ করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। ব্যয় করা হয়েছে ‘কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম ও ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন (এআইইটি) প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়)’ অধীনে। এই কারখানার জন্য আধুনিক ভবন করা হয়েছে, জার্মান প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে, কিন্তু কারখানা চালানোর জন্য কোনো শ্রমিক, কারিগরি কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। প্রকল্পেও কর্মী নিয়োগের কোনো প্রস্তাব ছিল না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, কারখানাটি পড়ে আছে।
শুধু এই কারখানা নয়, একই প্রকল্পের অধীনে তৈরি দুটি পূর্ণাঙ্গ ও পাঁচটি ছোট (মিনি) আকারের পরীক্ষাগার বা ল্যাবরেটরিও নির্মাণের পর ফেলে রাখা হয়েছে। কারণ, সেখানেও জনবল নিয়োগ করা হয়নি।
জনগণের অর্থের ‘অপব্যয়ের’ এখানেই শেষ নয়। গবাদিপশুর ভ্রূণ স্থানান্তরের নামে ২১ বছরে তিন দফা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামো হয়েছে, যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, কিন্তু ভ্রূণ আর স্থানান্তর হয়নি। তৃতীয় পর্যায়ের শেষ দিকে ভ্রূণ স্থানান্তরের বিষয়টিই প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়। কথা ছিল, এই প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত জাতের গরুর ভ্রূণ স্থানান্তর ও দেশের খামার পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এতে গরুর মাংস ও দুধের উৎপাদন বাড়বে। দাম সহনীয় থাকবে।
তিন দফার প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৫৮৩ কোটি টাকা। ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের জুন সময়ে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে ব্যয় করা হয়েছে ৪৩৩ কোটি টাকা। তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের কোনো সুফল এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। পুরো টাকা জনগণকে কর হিসেবে দিতে হয়েছে। উল্টো গরুর মাংসের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ, যা এখন ৭০০-৭৮০ টাকা। দুধের লিটার ছাড়িয়েছে ৯০ টাকা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কারখানা ও পরীক্ষাগারগুলো নিয়ে কী ভাবছে, তা জানতে ১৭ ডিসেম্বর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের কাছে গেলে তিনি প্রকল্পটির সর্বশেষ পরিচালক জসিম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গত জুনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে পুরো প্রকল্প হস্তান্তর করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এগুলো চালু করবেন। প্রকল্প হস্তান্তরের পর পরিচালকের আর কোনো কাজ নেই।
‘চ্যালেঞ্জে দেশের অর্থনীতি’-এটি দৈনিক যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের কিছু শর্ত বাস্তবায়নের ফলে দেশের অর্থনীতি নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ঋণের সুদহার বাড়ানো, জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিকমানের করা, ডলারের দাম বাড়ানো, মূল্যস্ফীতির হার কমাতে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ। এতে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। সব মিলে উদ্যোক্তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা ইতোমধ্যে আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তারা আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নের বিপক্ষে কথা বলেছেন।
সূত্র জানায়, আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় ও চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় করার আগে শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে একটি মিশন ৩ থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করেছে। তারা আগের শর্ত বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু নতুন শর্ত আরোপ করেছে।
এদিকে আইএমএফের আগের শর্তগুলো বাস্তবায়নের ফলে বেসরকারি খাতের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। উদ্যোক্তারা বলেছেন, আইএমএফের শর্তগুলো বাংলাদেশের মতো অনুন্নত দেশের জন্য উপযোগী নয়। এসব শর্ত বাস্তবায়নের ফলে বেসরকারি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি ঢাকা চেম্বার আয়োজিত একাধিক অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেছেন। আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ এটি অনুমোদন করে। ইতোমধ্যে তিনটি কিস্তি ছাড় হয়েছে। চতুর্থ কিস্তির অর্থ আগামী ফেব্রুয়ারিতে ছাড় হতে পারে। তিন কিস্তিতে আইএমএফের ঋণ বাবদ বাংলাদেশ পেয়েছে ২৩০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। চতুর্থ কিস্তি বাবদ ৬৪ কোটি ডলার পেতে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, আইএমএফের ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন করতে গত দুই বছর সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরেও করা হচ্ছে। তবে চলতি অর্থবছরে মুদ্রানীতি আরও কঠোর করা হয়েছে। জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে আরও কঠোর করার ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এতে ঋণের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, বাজারে টাকার প্রবাহ কমানো হয়েছে। টানা তিন বছর ধরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে মূল্যস্ফীতির হার কমানোর জন্য। এ হার মোটেও কমেনি। উলটো আরও বেড়েছে।
টানা তিন বছর ধরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করার ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানো হয়েছে। ঋণের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। ঋণের প্রবাহে লাগাম টানা হয়েছে। এতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে নতুন শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আগের শিল্পগুলোর সম্প্রসারণ কমেছে। এতে নতুন কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
গরিবের টিসিবি পণ্যে বাড়ছে ‘হকদার’-এটি দৈনিক সমকালের প্রথম পাতার শিরোনাম। খবরে বলা হয়, সয়াবিন তেল ফেরত দিয়ে টাকা নিলেন মনোয়ার হোসেন। বিষণ্ন মুখে ফিরে যাচ্ছেন। পা তাঁর চলছে না, দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তখনও লাইনে থাকা অসংখ্য মুখে খিস্তি। গরিবের জিনিস নিতেও মানুষগুলোর বিবেকে বাধে না!
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ী লিপিকার মোড়ে টিসিবি ট্রাকের সামনে এ ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে। এখানে হযরত এন্টারপ্রাইজ সয়াবিন তেল ও ডাল সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করছে। কথা বলে জানা যায়, মনোয়ার সরকারি চাকরিজীবী। মূল্যস্ফীতির চাপে সত্যিই তিনি অসহায়। বললেন, ‘পেট না চললে, বিবেক দিয়ে কী করব? কিন্তু হাত থেকে যখন মানুষ তেল কেড়ে নেন, কিছু করার থাকে না। বাধ্য হয়ে টাকা ফেরত নিয়েছি।’
বাজারে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম চড়া। দীর্ঘদিন উচ্চ মূল্যস্ফীতি চললেও আয় বাড়েনি মানুষের। ফলে সংসার সামাল দিতে মনোয়ারের মতো অসংখ্য মানুষ এখন টিসিবির পণ্য কিনছেন। এখানে আর গরিব বলে আলাদা করার সুযোগ থাকছে না। অনেক বাড়ির মালিক গৃহকর্মী পাঠিয়ে পণ্য কিনছেন।
টিসিবি দিনে জনপ্রতি ২ লিটার সয়াবিন তেল ও ২ কেজি মসুর ডাল বিক্রি করে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০০ এবং প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম নেয় ৬০ টাকা। বাজারে এখন সয়াবিন তেল ১৭৫ এবং মসুর ডালের কেজি ১০৫-১১০ টাকা। পরিবারের একজন পণ্য দুটি কিনলে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা সাশ্রয় হয়। সদস্য বৃদ্ধি করলে বাড়ে সাশ্রয়ের অঙ্কও। এ জন্যই ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রাকের অপেক্ষায় থাকছেন বহু মানুষ। বিক্রি শুরুর পর রীতিমতো ‘যুদ্ধে’ শামিল হচ্ছেন তারা।
টিসিবি কর্মকর্তারা জানান, দিনে প্রতিটি ট্রাকের মাধ্যমে ৮০০ কেজি ডাল ও ৮০০ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন তারা। প্রতিটি ট্রাক থেকে ৪০০ জন পণ্য কিনতে পারছেন। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে ৫০টি ট্রাকের সুবিধাভোগী বড়জোর ২০ হাজার। তাও ডিসেম্বর থেকে সরবরাহ না থাকায় চাল, আটা, আলু ও পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার রামপুরা টিভি সেন্টার, হাতিরঝিল মধুবাগ ব্রিজ, চৌধুরীপাড়া পেট্রোল পাম্প, জাতীয় প্রেস ক্লাবসংলগ্ন কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন, বেগুনবাড়ী, সাতরাস্তাসহ অন্তত ১০ স্পট সরেজমিন ঘুরে দেখার সময় কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় অর্ধেক মানুষ পণ্য পাচ্ছেন না। নির্দিষ্ট সরবরাহ শেষ হয়ে যাওয়ায় একরাশ হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন তারা। প্রায় সবখানে দেখা যায়, ক্রেতাদের মধ্যে শৃঙ্খলা রাখতে ট্রাকের কর্মীরা মার্কার দিয়ে সিরিয়াল নম্বর হাতে লিখে বসিয়ে রাখছেন।
দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতার খবর ‘১১৬ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন বিশ্বব্যাংকের’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জন্য তিন প্রকল্পে ১১৬ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি, পানি ও স্যানিটেশন সেবার উন্নতি এবং সবুজায়ন ও জলবায়ুসহনশীলতা উন্নয়নে এই সহায়তা দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে বৃহস্পতিবার (যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময়) ইস্যু করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বিবৃতিতে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বড় দূষণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও রয়েছে দেশটি। এর ফলে প্রতিটি খাতে জলবায়ুসহনশীলতা উন্নত করা ও দূষণের দুর্যোগ মোকাবিলা করা গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, নতুন এই অর্থায়ন বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বাস্থ্য, পানি ও স্যানিটেশনের মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো উন্নত করবে। এর মাধ্যমে পরিষ্কার, জলবায়ুসহনশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপিত হবে।
বিশ্বব্যাংক জানায়, ১১৬ কোটি ডলারের মধ্যে সবুজায়ন ও জলবায়ুসহনশীলতা উন্নয়নে ৫০ কোটি ডলার অর্থায়ন করা হবে। সেকেন্ড বাংলাদেশ গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট ক্রেডিটের মাধ্যমে এই অর্থায়ন স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে সবুজায়ন ও জলবায়ুস্থিতিস্থাপক হস্তক্ষেপের জন্য জনসাধারণের পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে উন্নতির জন্য নীতিসংস্কারকে সমর্থন করবে।
এছাড়া ৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের ‘স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং জনসংখ্যা সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবায় জনগণের প্রাপ্যতা উন্নত করার পাশাপাশি সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে স্থিতিস্থাপক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। এটি প্রায় ৫১ লাখ মানুষকে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা দেবে। এই কর্মসূচি জনস্বাস্থ্যসুবিধায় স্বাভাবিক প্রসব ও সিজারিয়ান সেকশন ডেলিভারি সব ক্ষেত্রেই জন্মের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে মা ও নবজাতকের মৃত্যুহার কমাতে সাহায্য করবে।
২৮ কোটি ডলারের ‘চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টে’র মাধ্যমে চট্টগ্রামের ১০ লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হবে। প্রায় ২ লাখ নতুন পরিবারের পানির সংযোগ তৈরির পাশাপাশি নিম্ন আয়ের প্রায় ১ লাখ মানুষকে উন্নত স্যানিটেশন সেবা দেবে প্রকল্পটি। এটি ২০৩৫ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষকে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিনসেবা প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক উদ্যোগ বা কর্মসূচির একটি অংশ।
‘নির্বাচন ইস্যুতে সরকারকে চাপে রাখতে চায় বিএনপি’-এটি দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, নির্বাচন ইস্যুতে সরকারকে চাপে রাখবে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান দলটির কাছে এখনো সুস্পষ্ট না হওয়ায় সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে নতুন কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দলটির চিন্তা অনুযায়ী, সভা সমাবেশের মতো কর্মসূচি একদিকে যেমন নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে কাজে লাগানো যাবে, অন্যদিকে জনগণ যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত সেটিকেও তুলে ধরা হবে।
সরকারের তরফ থেকে ইতোমধ্যে সম্ভাব্য নির্বাচনের যে ধারণা দেয়া হয়েছে, সেটিকে ‘অস্পষ্ট ও হতাশাজনক’ বলে মনে করে বিএনপি। দলটি মনে করে, ফ্যাসিবাদীদের দেশবিরোধী নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় নির্বাচনই এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত এবং সেদিকেই তাদের ফোকাস করা দরকার। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠিত হয়েছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে এখনো সুনির্দিষ্টভাবে দিনক্ষণ না বলায় প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে পারছে না ইসি। তাই নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সরকারের ওপর রোডম্যাপের চাপ অব্যাহত রাখার অংশ হিসেবে বড় বড় সভা-সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি। গত বুধবার অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বেশ কয়েকজন নেতা এমন প্রস্তাব দেন।
সরকারের অবস্থান স্পষ্ট না হওয়ায় ইসি গঠনের পরও নির্বাচন নিয়ে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছেন না তারা। বিএনপি এখন রাষ্ট্র মেরামতের দলীয় রূপরেখা ৩১ দফাকে নতুন করে ব্র্যান্ডিং করছে। বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার পর এখন জেলাভিত্তিক কর্মশালা চলছে, যেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হচ্ছেন। জেলা পর্যায়ের এই কার্যক্রম শেষ হলে নির্বাচনের দাবিতে আরো সোচ্চার হবে দলটি। এর অংশ হিসেবে সারা দেশে সভা-সমাবেশের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে এর দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত না হলেও আগামী ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ মাঠে নামতে পারে বিএনপি।
জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সম্ভাব্য কী কর্মসূচি দেয়া যায়, সে ব্যাপারে কয়েকজন প্রস্তাব দেন। এ সময় কেউ কেউ বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়া উচিত হবে না। কারণ, সরকার ফেল করলে সেটি হবে সামগ্রিক ব্যর্থতা। বিএনপি এই সরকারকে ব্যর্থ দেখতে চায় না। তারা চান, সরকার একটি অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তাদের কাজ সম্পন্ন করুক। যে কারণে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে আমরা যেতে পারব না। কারণ, এই সরকারকে ব্যর্থ করানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। এই সরকার ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার ফসল। তারা ব্যর্থ হলে সঙ্কট আরো ঘনীভূত হবে। এ কারণে আমাদের উচিত হবে, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং জনগণ যে ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে রয়েছে সেটি তুলে ধরে সারা দেশে বড় বড় সমাবেশ করা।
‘ই-পাসপোর্টের যুগেও এমআরপি’-এটি দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা বিশ্বেই এখন ই-পাসপোর্টের কারবার; অথচ বাংলাদেশ ২০২৫ সাল পর্যন্ত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (যন্ত্রপাঠ্য পাসপোর্ট বা এমআরপি) সেবা বহাল রাখতে চাইছে। ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা নিতে চাচ্ছে না বাংলাদেশ। এমআরপি যথেষ্ট ব্যয়বহুল সেবাও বটে।
প্রবাসে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এমআরপি সেবা ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যদিও ১১৯তম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ২০২০ সালেই ই-পাসপোর্ট যুগে ঢুকেছে। সৌদি আরব, কাতার, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, লেবানন প্রভৃতি দেশে নানা পেশায় নিয়োজিত প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি এ বছরের মাঝামাঝি পাসপোর্ট-জটিলতায় পড়ে। জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে তথ্যের বিভিন্নতা থাকায় ই-পাসপোর্ট করতে পারছে না তারা। পাসপোর্ট মূল দালিলিক প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য হওয়ায় বিদেশে বৈধভাবে থাকার সুযোগও হারাচ্ছে তারা। এমআরপি থাকলে ই-পাসপোর্ট করার সুযোগও পাবে প্রবাসী শ্রমিকরা। ওয়ার্ক পারমিট-সংক্রান্ত জটিলতায় পড়তে হবে না তাদের।
পাসপোর্ট সংকটের নিরসনের জন্য ১৫ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী তিন সপ্তাহের মধ্যে বিদেশের যেসব মিশনে পাসপোর্ট-জটিলতা চলছে সেসব জায়গায় ১ লাখ ৯০ হাজার এমআরপি জরুরিভাবে তৈরি করে ফেডেক্সের মাধ্যমে পৌঁছানোর কাজ করছে সরকার। প্রতিদিন গড়ে আট হাজার এমআরপি যাচ্ছে বিদেশে। ডিসেম্বরেই সবার পাসপোর্ট পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাসপোর্ট সংকট কেন জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (কনস্যুলার ও কল্যাণ) শাহ মুহাম্মদ তানভীর মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিশনগুলোতে এমআরপি কমানোর নির্দেশনা দেওয়া ছিল। আর ই-পাসপোর্ট করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, সবাইকে ই-পাসপোর্ট করতে হবে। কিন্তু তথ্যগত জটিলতায় অনেকেই ই-পাসপোর্ট করতে পারেনি। সংকট প্রকট হওয়ায় গত ১০ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এমআরপি ছাপিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।’
দ্য ডেইলি স্টারের প্রধান শিরোনাম ‘Large budget looms amid high inflation’ অর্থাৎ ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই বড় বাজেট’।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ৪৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট পরিকল্পনা করেছে সরকার, যা চলতি বাজেটের তুলনায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ নির্ধারণের কথা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
নতুন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২ দশমিক ৭০ লাখ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। তবে চলতি বছরের ২ দশমিক ৬৫ লাখ কোটি টাকার মূল এডিপি বাজেট সংশোধিত হয়ে ২ দশমিক ১৬ লাখ কোটিতে নেমে আসবে।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে আরও বরাদ্দের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সরকার নতুন মেগা প্রকল্প গ্রহণ এড়াতে বলেছে, যদি তা অপরিহার্য না হয় বা বিদেশি তহবিল নিশ্চিত না থাকে।
এছাড়া কিছু উদ্ভাবনী প্রকল্প নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।